তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চায় বিআইজেএফ

ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রার বছর ২০১০ সালে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ছিল ৫০০ কোটি টাকারও কম। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ সালের জাতীয় বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৫ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইসিটি বিভাগের জন্য বরাদ্দ হয়েছে এক হাজার ৯২০ কোটি টাকা যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ ২০ শতাংশ বাড়ানোরও প্রস্তাব রয়েছে।

বিআইজেএফ মনে করে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এ বরাদ্দ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে এ খাতের উন্নয়নে বরাদ্দকৃত এ অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

আজ রাজধানীর কাওরান বাজারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) আয়োজিত ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট : তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন হয়, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০১০ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে তথ্যপ্রযুক্তি অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আইসিটির চারটি বিষয়কে অগ্রাধিকার ক্ষেত্র হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে সরকারের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে ই-গভর্নেন্স; মানবসম্পদ উন্নয়নে ই-শিক্ষা; দেশীয়/বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ই-বাণিজ্য এবং সরকারের সেবাসমূহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ই-সেবা। কিন্তু এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা যাচ্ছে ই-বাণিজ্যে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আবার ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ই-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে শীর্ষ মাধ্যম আমদানিকৃত স্মার্টফোনে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বর্ধিত এ ভ্যাট এবং শুল্ক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবিকে যৌক্তিক মনে করে ই-বাণিজ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার এবং আমদানিকৃত স্মার্টফোনে শুল্ক আগামী দুই বছরের জন্য ১৫ শতাংশ করা যেতে পারে।

এছাড়া ই-কমার্স, রাইড শেয়ারিং, কম্পিউটার ও হার্ডওয়্যার খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষায় বাজেটে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে বিআইজেএফ সভাপতি মোজাহেদুল ইসলাম ঢেউয়ের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক হাসান জাকির।

অনুষ্ঠানে বিআইজেএফ সহসভাপতি নাজনীন নাহার, সহ সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাছিব রহমান, কোষাধ্যক্ষ এনামুল করিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জান্নাতুল ইসলাম রাহাদ এবং নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান সোহেল ও রাহিতুল ইসলাম রুয়েল উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিআইজেএফ’র সিনিয়র সদস্য পল্লব মোহাইমেন, আব্দুল হক অনু, আব্দুল ওয়াহেদ তমাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে বিআইজেএফ’র পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়

>> তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ ও বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

>> ই-কমার্স খাতে আরোপিত ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

>> মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে যে বিপ্লব শুরু হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। তবে এসব কারখানা থেকে দেশের চাহিদা অনুযায়ী ডিভাইস তৈরি হতে আরও কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে। আমাদের ই-কমার্স খাত, ইন্টারনেট মূলত স্মার্টফোন নির্ভর। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ শুল্ক থাকায় এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন আমদানিতে মোট করের পরিমাণ ৩২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করায় স্মার্টফোনের ওপর বর্ধিত শুল্ক এ খাতে অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। ফলে এ খাতে আগামী দুই বছরের জন্য স্মার্টফোনে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

>>স্থানীয় উদ্যোক্তা ও নির্মাতাদের সুরক্ষা দিতে কম্পিউটার-ল্যাপটপ ও সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যার পণ্যেও দেশীয় নির্মাতা এবং ই-কমার্স, রাইড শেয়ারিং ও অনলাইন ভিত্তিক দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকা দরকার।

>> তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ১৬ শতাংশ। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। নানামুখী উদ্যোগের পরও তথ্য প্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে নারীরা। তাদের উন্নয়নে বাস্তবমুখী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

>> এবারের বাজেটে স্টার্টআপের জন্য যে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হোক।

>> বাজেটকে কর্মসংস্থানমুখী করার যে উদ্যোগগুলোর কথা বলা হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা হোক। ২০২১ সাল নাগাদ আইসিটিখাতে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানমুখী উদ্যোগ নিতে হবে।

>> উদ্ভাবন ও গবেষণা ছাড়া জাতি সামনে এগোতে পারে না। এবারের বাজেটে উদ্ভাবন ও গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গবেষণা ও উন্নয়নখাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।

>> এবারের বাজেটে বøকচেইনের মতো নতুন প্রযুক্তিতে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের এ উদ্যোগ ইতিবাচক।

>>তরুণদের নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও উদ্ভাবিত সামগ্রী ব্র্যান্ডিং ও বাণিজ্যিকীকরণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাঠামো জোরদার করতে হবে।

>> আইসিটি নীতিমালা অনুযায়ী অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় জরুরি।

>> প্রযুক্তি খাতে যতটা সম্ভব বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

>> প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা সুলভ মুল্যে পৌঁছাতে হবে। সাশ্রয়ী দামে মোবাইল ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে প্রয়োজনে এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে।

>> দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে উন্নত প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

>> সাইবার নিরাপত্তায় ক্ষেত্রে আরও যুগোপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে।

>> বাজেটের সফল বাস্তবায়নে সব স্টেকহোল্ডার বা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সব সংগঠন বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্য, ই-ক্যাব, বিআইজেএফসহ সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।

Share This:

*

*