বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭

মেক ইন বাংলাদেশ স্লোগানে শুরু হয়েছে তিন দিনের তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭’। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনব্যাপি এই মেলা চলবে শুক্রবার ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। সবার জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনী চলবে সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। তবে মেলায় প্রবেশের জন্য অনলাইন নিবন্ধন বা স্পট নিবন্ধন করতে হবে। এর জন্য মেলায় থাকবে নিবন্ধন বুথ। এ ছাড়া নিবন্ধনের ওয়েবসাইট (www.ictexpo.com.bd) থেকে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধন করলে কিউআর কোডসহ ভিজিটর কার্ড ও উপহার পাবেন দর্শকেরা। মেলায় গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে সুপরিচিত প্রযুক্তি ব্র্যান্ড এইচপি, টিপিলিংক; সিলভার স্পন্সর হিসেবে অংশগ্রহণ করছে ডাহুয়া টেকনোলজি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রায় ৬,৫০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির নতুন সব পণ্য, সেবা, জীবনশৈলী ও ধারণা উপস্থাপন করছে এসব প্রতিষ্ঠান। ১৩২টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে বিভিন্ন সেবা প্রদর্শন করা হচ্ছে। নানা ছাড় ও উপহাওে বিক্রি করা হচ্ছে প্রযুক্তিপণ্য।

আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেইমে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম ও বিসিএসের সভাপতি আলী আশফাক , বিসিএসের মহাসচিব ইঞ্জি. সুব্রত সরকার। মেলা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে। এর সুফল পেতে হলে ডিজিটাল বাংলাদেশকে বাণিজ্যিকরণ করতে হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী  আরও বলেন,  আগামী প্রজন্মের হাত ধরে আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাতে পারবো। এদেরকে তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত শিক্ষক। আমাদের দেশে উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। প্রয়োজনে উন্নত দেশ থেকে শিক্ষক এনে তরুণদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন,  ‘তৈরি পোশাক শিল্পের মতো আইসিটি খাতেও বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে ইন্টারনেট অব থিংকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি,রোবোটিকসসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। ’ তিনি  বলেন,  ‘প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নেবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের বাণিজ্যিকরণের অংশ হিসেবে আউটসোর্সিং খাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘হার্ডওয়্যার খাতে সক্ষমতা বাড়াতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস ২০২১ সালের মধ্যেই হার্ডওয়্যার রপ্তানি করবে বাংলাদেশ।

পলক বলেন, ‘দেশের হার্ডয়্যার খাতের বড় একটি অংশের বাজার দখল করে আছে ওয়ালটনের মত খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান। তাদের দেখাদেখি সামস্যাং, এলজিও দেশে প্লান্ট খুলতে বাধ্য হচ্ছে।’

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম  বলেন, আমরা এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাস করছি। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তাবায়নে কাজ করছে আইসিটি ডিভিশনের আওয়তাধীন হাইটেক পার্ক কতৃর্পক্ষ। এই পার্কে বিনিয়োগের নতুন দ্বার সৃষ্টি হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইমরান আহমেদ এমপি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিখাতে আমাদের অবকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে, এ অবকাঠামোকে কাজে লাগাতে হবে।যারাই উদ্যোগ নেবেন তাদের সব রকমের সহায়তা করবে সরকার।

আইসিটি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণে আইসিটি এক্সপোর মত প্রদর্শনী বিশেষ ভূমিকা রাখে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়। এখন এটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

বিসিএস সভাপতি আলী আশফাক বলেন, সরকারের সকল আইসিটি পলিসি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি। এরই অন্যতম উদাহরণ আজ থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭। এটি দেশের সর্ববৃহৎ আইসিটি প্রদর্শনী।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস)  যৌথ  উদ্যোগে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবার বর্ণাঢ্য প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭’। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এ আয়োজন। যেসব অধুনা প্রযুক্তি ও ধারণা তথ্যপ্রযুক্তির প্রকৃতি ও ব্যবহার অবিশ্বাস্য গতিতে বদলে দিচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটুকু এগোতে পেরেছে, আমাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা কীÑ তা উপস্থাপন করা হচ্ছে এ প্রদর্শনীতে।  বিশেষ করে হার্ডওয়ার, ম্যানুফ্যাকচারিং ও গবেষণা খাতের সম্ভাবনা, কর্মপ্রচেষ্টা ও রূপকল্প তুলে ধরা হচ্ছে এতে। উপস্থাপন করা হচ্ছে হাই-টেক পার্ক এবং তথ্যপ্রযুক্তির উৎপাদন অবকাঠামোর অগ্রগতিও। জনসচেতনতা সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি, তরুণদের অংশগ্র্রহণ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ ও উদ্যোক্তা তৈরি করতে সহায়ক হবে এ প্রদর্শনী।

মেলার আহ্বায়ক ইঞ্জি. সুব্রত সরকার জানান, এবারের মেলা শুরু থেকে জমজমাট। সবাই দারুণ সাড়া দিয়েছেন। তরুণদেও অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। এবার মেলায় তরুণ উদ্ভাবকদেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবারের মেলায় আটটি দেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী, প্রতিনিধি, স্পিকার অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিটুবিতে অংশ নেবেন। এতে দেশের প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। প্রদর্শনীতে আরও থাকছে লোকাল ম্যানুফ্যাকচারাস ফোরাম, গেমিং, সেলফি, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিট দ্যা লিডারস, লাইভ ইভেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিনামূল্যে প্রবেশ ও ইন্টারনেট, ডিজিটাল সেবা ইত্যাদি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য প্রদর্শনী উপলক্ষে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা দেয়া হবে। প্রদর্শনী চলাকালে মেলা প্রাঙ্গনে ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কয়েকটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

প্রদর্শনীর বিস্তারিত থাকছে এক্সক্লুসিভ ওয়েব পোর্টাল www.ictexpo.com.bd -তে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও (www.facebook.com/BangladeshICTexpo) প্রদর্শনী নিয়ে থাকছে নানা আয়োজন। প্রদর্শনীর আহ্বায়ক সুব্রত সরকার আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও তাঁরই নির্দেশিত মেক ইন বাংলাদেশ গড়তে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মেক ইন বাংলাদেশ প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সব সময় কাজ করে আসছে ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। এবারের আইসিটি এক্সপো ২০১৭ এর লক্ষ্য হচ্ছে-বাংলাদেশকে ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি হিসেবে বিশে^ পরিচিতি করে তোলা। বাংলাদেশে আইসিটি খাতে ইন্ড্রাস্ট্রি তৈরিতে আমরা মেলার মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। নতুন যাঁরা উদ্ভাবক ও স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছে তারা যেন বাণিজ্যিকভাবে তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারে সেজন্য সহযোগিতা হিসেবে ইন্ড্রাস্টি ও তাদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে দেবে এ মেলা। আইসিটি মেলার দর্শকদের তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য ভবিষ্যত কাজে লাগাব। এবারের মেলায় উদ্ভাবনী নতুন পণ্য ও আইওটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

Share This:

*

*