সম্প্রতি স্বতন্ত্র এক গবেষণার ঘোষণা দিয়েছে ডিজিটাল পেমেন্ট প্রযুক্তিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভিসা। ভিসার সহায়তায় স্বতন্ত্র এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছে রুবিনি ল্যাব। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকাসহ বিশ্বের প্রধান সব শহরে ডিজিটাল পেমেন্টস ব্যবহার বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ডিজিটাল পেমেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপরি নিট লাভ করতে পারবে। এছাড়াও, গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের ১শ’ শহরে কার্ড ও মোবাইল পেমেন্টসের মতো ইলেকট্রনিক পেমেন্টসের ওপর আরও বেশি নির্ভরতার মাধ্যমে প্রতিবছর এ সংখ্যাকে ৪শ’ ৭০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব যা আনুমানিক শহরের গড় জিডিপির ৩ শতাংশ।
উদাহরণস্বরূপ: ঢাকার ক্ষেত্রে শহরটির পক্ষে ১৫,৮১৭,০০০ জনসংখ্যা এবং ৪৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপি নিয়ে প্রতিবছর ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপরি নিট লাভ করা সম্ভব। আগামী ১৫ বছরে শহরটির আনুমানিক আশু পরিবর্তনযোগ্য প্রভাব (ক্যাটালিকটিক ইমপ্যাক্ট) পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধির বেসিস পয়েন্ট হার ৩৪.৯ এবং ৪.৪ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। ‘ক্যাশবিহীন নগর: ডিজিটাল পেমেন্টসের উপলব্ধ সুবিধা’ একটি অনন্য গবেষণা যেখানে শহরগুলো নগদ অর্থহীন অবস্থার প্রয়োজনীয় স্তরে পৌঁছানোর মাধ্যমে সম্ভাব্য নিট লাভ করতে পারে তার সম্ভাবনা হিসাব করে দেখিয়েছে। গবেষণায় এভাবে সংজ্ঞায়িত করে দেখানো হয়েছে যে, একটি শহরের সমগ্র জনসংখ্যার ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহার বর্তমানে ওই শহরের শীর্ষ দশ শতাংশ ব্যবহারকারীর সমান। গবেষণায় নগদ অর্থ নির্মূলের পরিবর্তে এর সম্ভাব্য সুবিধা এবং ডিজিটাল পেমেন্টসের ব্যবহার বৃদ্ধির খরচ হিসাব করে দেখানো হয়েছে।
নগদ অর্থের ওপর নির্ভরতা কমানোর মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী তিনটি প্রধান গ্রুপ ভোক্তা, ব্যবসা এবং সরকারের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাব্য সুবিধা দেখানো হয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, ডিজিটাল পেমেন্টস ব্যবস্থা উপরি সুবিধা হিসেবে সমন্বিত ও প্রত্যক্ষভাবে বিশ্বের ১শ’টি শহরে আনুমানিক ৪শ’ ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষভাবে যোগ করতে পারে। বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:
– বিশ্বের ১শ’টি শহরের ভোক্তাদের সম্ভাবনা রয়েছে প্রতিবছর আনুমানিক সরাসরি নিট সুবিধা হিসেবে প্রায় ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের। এই প্রভাব নগদ অর্থ সম্পর্কিত অপরাধ হ্রাস ছাড়াও ব্যাংকিং, খুচরা এবং ট্রানজিট লেনদেন পরিচালনার সময় বাঁচাবে ৩.২ বিলিয়ন ঘণ্টা।
– বিশ্বের ১শ’টি শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে প্রতিবছর আনুমানিক সরাসরি নিট সুবিধা হিসেবে প্রায় ৩শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের। অনলাইন ও ইন-স্টোরের কাস্টমার বেজের ক্ষেত্রে এই প্রভাব ইনকামিং ও আউটগোয়িং পেমেন্টসের ক্ষেত্রে ৩.১ বিলিয়ন ঘন্টা সময় বাঁচানো ছাড়াও সেলস রেভিনিউ বাড়াবে। এছাড়াও, এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে নগদ অর্থ গ্রহণ এবং চেকের খরচের ক্ষেত্রে প্রতি মার্কিন ডলারের ক্ষেত্রে খরচ হয় ৭.১ সেন্ট যেখানে ডিজাটাল পেমেন্টেস- এ খরচ হবে ৫ সেন্ট।
– বিশ্বের ১শ’টি শহরের সরকারের সম্ভাবনা রয়েছে প্রতিবছর আনুমানিক সরাসরি নিট সুবিধা হিসেবে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের। এই প্রভাব নগদ অর্থ সম্পর্কিত অপরাধ হ্রাস ছাড়াও রাজস্ব আয় বাড়াবে, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটাবে, প্রশাসনিক কার্যদক্ষতার খরচ কমাবে এবং নিম্ন ফৌজদারি বিচারের খরচ কমাবে ।
এ নিয়ে ভিসার ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার গ্রুপ কান্ট্রি ম্যানেজার টি আর রামাচান্দ্রাণ বলেন, ‘শহরগুলোই অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির নতুন ইঞ্জিন। সত্যিকার অর্থে অর্থনীতির সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে এবং বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে পৌঁছাতে, শহরের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পেমেন্টস ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বৈশ্বিক পর্যায়ের এ গবেষণা দেখিয়েছে নগদ অর্থবিহীন ব্যবস্থা কিভাবে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তার জন্য প্রকৃত সুবিধা নিয়ে আসবে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে গড়ে বার্ষিক ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিট সুবিধা পেতে পারে ঢাকা, যা আনুমানিকভাবে এ শহরের গড় জিডিপি’র ৩ শতাংশের সমান।’
শহরগুলোতে ডিজিটাল পেমেন্টস ব্যবহার বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব আর্থিক সুবিধার বাইরেও ভোক্তা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে সরাসরি উপকৃত করবে। এছাড়াও, ডিজিটাল পেমেন্টস’র দিকে পরিবর্তনের সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে শহরের অর্থনীতি কার্যক্রম সহ জিডিপি, কর্মসংস্থান, আয় এবং প্রবৃদ্ধির উৎপাদনশীলতার ওপর।
এ নিয়ে হেড অব রুবিনি থটল্যাব লু সেলি বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষকদের তথ্য অনুযায়ী, নগরবাসীদের কেনাকাটা, ভ্রমণ এবং বসবাস নিয়ে স্মার্টফোন, পরিধেয় ডিভাইস থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমনকি চালকবিহীন গাড়িতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে রূপান্তর ঘটছে। এক্ষেত্রে, ইলেকট্রনিক পেমেন্টস ব্যবস্থার ভিত্তি দৃঢ় না হলে, শহর ও শহরের বাসিন্দারা সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল ভবিষ্যতের সব সুবিধা নিতে পাবেন না।’