বিশ্বের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বিশেষ করে ইন্টারনেট অব থিংস, অ্যানালাইটিকস, সামাজিক গণমাধ্যম, ক্লাউড, মোবাইল টেকনোলজির ক্ষেত্রে গড়ে তোলা হচ্ছে দক্ষ মানবসম্পদ। দক্ষ মানব সম্পদ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তার বাজারে পরিণত হওয়ার কারণেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বিশ্বের প্রবেশ দ্বার। গতকাল রাতে রাজধানীর এক হোটেলে (সোনারগাঁও হোটেল) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প আয়োজিত ‘স্টাটেজিক সিইও আউটরীচ প্রোগ্রাম’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের দিক-নির্দেশনায় সরকার আইসিটি খাতের সম্প্রসারণে বিভিন্ন উদ্যোগের বাস্তবায়ন করছে। নীতিমালা ও আইন প্রনয়ণ করা হয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইটি/আইটিইএস শিল্পের জন্য কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে, আইটি পার্কসহ আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে, উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ইউনিয়ন পর্যন্ত। এসব সুবিধার পাশাপাশি প্রায় ১০ কোটি কর্মক্ষম তারণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে বিশ্ববাজারের চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা হচ্ছে।
পলক বলেন, দেশের আইটি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিসিজি কাজ করবে। তাদেরকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। যাতে আইটি খাতে টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি হয় ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকার নানা ধরনের সুযোগ, সুবিধা ও প্রণোদনা দিচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগকারিদের জন্য রয়েছে কর অবকাশ সুবিধা। উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারিদের সুবিধার্থে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এজন্য আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্র শুধু মাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক না করে তা বিভিন্ন সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যাতে দেশের অন্যান্য স্থানেও উদ্যোক্তা তৈরি হয় এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠে।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালের আগে দেশে কোন ই-সার্ভিস ছিল না। সরকার বিভিন্ন ধরনের সেবার ডিজিটাইজেশন করেছে। এমনকি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করে গস্খামে বসবাসকারি মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি বিভিন্ন ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি)’র গ্লোবাল চেয়ারম্যান হ্যানস পল বার্কনার বালেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ হতে পারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরবর্তী গন্তব্য। এমন বিশ্বাস থেকে বিসিজি বাংলাদেশের আইটি খাতের উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করবে। সভাপতির বক্তব্যে তথ্যপ্রযুক্তি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, দেশের বিকাশমান আইটি খাতের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয়সহ আইটি খাতের উন্নয়নের জন্য এলআইসটি প্রকল্প থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান বিসিজিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা সিইও আউটরীচ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের আইটি খাত আরও বিকশিত হবে। অনুষ্ঠানে বিসিসির নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকার, এলআইসিটি প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম, বিসিজির গ্লোবাল চেয়ারম্যান পল হ্যানস বার্কনার, ন্যাসকমের সাবেক প্রেসিডেন্ট সোম মিত্তাল, বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিস সভাপতি মোস্তফা জব্বারসহ শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আইটি খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বিসিজি আগামী দু’বছর দেশের আইটি প্রতিষ্ঠান ও এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে (সিইও) বিদেশের আইটি প্রতিষ্ঠান ও সিইওদের যোগাযোগ, সম্পর্ক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন ঘটিয়ে আইসিটি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে দু’টি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন বিসিজির পার্টনার ও কুয়ালালামপুর চ্যাপটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জারিফ মুনীর এবং বিসিজির পার্টনার ও নয়াদিল্লী চ্যাপ্টারের পরিচালক বিকাশ জৈন। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন এলআইসিটি প্রকল্পের কম্পোনেন্ট টীম লিডার সামি আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ‘শীফটিং গিয়ারস: এ্যাকসেলারিটিং বাংলাদেশ আইসিটি গ্রোথ সাইকেল’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিসিজি বাংলাদেশ এবং বিদেশী আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি এবং একে অপরের মধ্যে ব্যবসায়িক উন্নয়নে একটি দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইটি/আইটিইএস খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে করণীয় নির্র্ধারণে বিসিসি কর্তৃক বাছাইকৃত শীর্ষ ৫ থেকে ৭টি আইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি পাইলট আউটরীচ প্রোগ্রাম চালু করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল গত জুনে দেশের আইটি/আইটিইএস খাতের উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিসিজিকে নিয়োগ দেয়।
বিসিজি সিইও আউটরীচ প্রোগামের আওতায় বাংলাদেশের আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিদেশের আইটি প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ, সম্পর্ক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন, বিদেশী বিনিয়োগকারিদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে আইটি/আইটিইএস খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ কৌশল প্রণয়ন করবে।