লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তরুণরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এ চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত মোট প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন ১৫৬০ জন। এর মধ্যে সফলভাবে আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হয়েছেন ৪৮৫ জন। বৃহত্তর ঢাকার বিভিন্ন জেলায় তাদের সম্মিলিত আয় ৪১ হাজার ৫৭৯ ডলার বা ঢাকার অংকে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৩২০ ঢাকা। ফ্রিল্যান্সারদের ব্যক্তিগত এই আয়ের পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ জেলায় প্রশিক্ষণ পাওয়া ১৪০ জনের মধ্যে সফলভাবে ২৫ জন আউটসোর্সিং করে আয় করেছেন ৩২৬০ ডলার। নারায়নগঞ্জে প্রাশিক্ষণগ্রহনকারী ৪০ জনের মধ্যে ১১ জন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করেছেন ১১৯০ ডলার। নরসিংদীতে ৪০ জনের মধ্যে থেকে ১৩২ জনের আয় ৮৩০ ডলার। টাঙ্গাইলে ১৬০ জনের মধ্যে থেকে ৩৫ জনের আয় ৩৩৪০ ডলার। কিশোরগঞ্জে প্রশিক্ষণ পাওয়া ২০০ জনের মধ্যে থেকে ৩২ জন আয় করেছেন ১৮৪০ ডলার। রাজবাড়িতে ৮০ জনের মধ্যে থেকে ২৫ জন আয় করেছেন ২২৫০ ডলার। মাদারিপুরে ১৯ জন ১১৫০ ডলার আয় করেছেন। শরিয়তপুরে ৭ জন আয় করেছেন ৪৩০ ডলার। মানিকগঞ্জে ১২০ জনের মধ্যে থেকে ৯০ জন ৭৫৬০ ডলার আয় করেছেন। ফরিদপুরে ৪৫ জন ৪৩৫৫ ডলার আয় করেছেন। গাজিপুরে ১৬০ জনের মধ্যে থেকে ৮০ জন ৯১০০ ডলার আয় করেছেন।
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণ গ্রহন করে এখন ¯^াবলম্বি ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি। এই সমস্যায় নিয়ে আমি এবং আমার পরিবার যখন টানপোড়নে পড়ি তখন লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারি। অনলাইনে আবেদন করে ডিজিটাল মার্কের্টিংয়ের ওপর ৫০ দিনের কোর্সটি সম্পন্ন করি। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে আমি প্রথম এসইও‘র মাধ্যমে ২৫ ডলার আয় করি। বর্তমানে আমি বিদেশী কাজের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু ডাটা এন্ট্রির কাজও করছি। এখন আমি ভালো আয় করে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণ গ্রহন করে নারীরাও ভালো আয় করছেন। তাদেরই একজন তাসমিন নাহার। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আাগে আমি একটি পত্রিকার মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারি। জানুয়ারিতে ৫০ দিনের গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর ফ্রি কোর্স করি। এই কোর্সটি শুধু ক্লাসরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমরা সারাক্ষণ ব্যাচের সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একে অপরের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছি। আমাদের প্রশিক্ষণ পরবর্তীতেও ছোট খাটো সমস্যায় পড়লে আমরা আমাদের ট্রেইনার সেহাগ ভাইকে ফোন করেছি, তিনি আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক ছিলেন। কোর্স শেষ করার পর একটি মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলি। আমি এখন ফাইবারে কাজ করছি। আমার প্রথম কাজ ছিল ১৫ ডলারের। এখন আমি ভালো আয় করছি।’
তরুণদের হাত ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেক খানি এগিয়ে যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুবীর চৌধুরী বলেন, স্বাধীনভাবে উপার্জন করে ভালো থাকার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। তরুণরা বিদেশী মুদ্রা আয় করে নিজেরা ভালো থাকার পাশাপাশি দেশকে ভালো রাখতে পারে। তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই নয়, মেনটরিংসহ প্রয়োজনীয় সবরকমের সহায়তা দেবে বলে।
লার্নিং অ্যান্ড প্রকল্পের পরিচালক মির্জা আলী আশরাফ বলেন, ‘২০১৪ সালে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ কোটি ইউএস ডলার আয় করার লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ৬৫০টি ব্যাচে ১৩ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে একটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের কার্যকর ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই প্রকল্পটি সফল হলে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা অনেকদুর এগিয়ে যেতে পারবো।’
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এই তিনটি বিষয়ে ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষনার্থীরা যদি মাসে ২৫০ ডলার করে আয় করতে সক্ষম হন তাহলে তারা একটি চাকরির সমমানের আয় করবে।