সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সবার আগে দরকার সচেতনতা। এবং এটি করতে হবে একেবারে শিশু থেকে বৃদ্ধ, শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব খানে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশন যে কাজটি করছে এটি মূলত সরকারেরই কাজ। এজন্য সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, আগামীতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে সাইবার সচেতনতায় কর্মসূচি নেয়া হবে।
‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস-২০১৬’ উপলক্ষে শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তৃতীয় তলায় স্বাধীনতা হলে এ সেমিনার হয়। মাসের প্রথম দিনের আয়োজন ‘সাইবার নিরাপত্তা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার। সংগঠনের উপদেষ্টা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুফি ফারুক ইবনে আবুবকরের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব (আইসিটি) সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার।
শনিবার থেকে শুরু হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর। ২০০৪ সাল থেকে আমেরিকা, ২০১১ থেকে নরওয়ে এবং ২০১২ থেকে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ এ মাসকে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করছে। সাইবার দস্যুতা থেকে নিরাপদে থাকতে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি নেয়া হয় এ মাসে। বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো এবার এটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সিসিএ ফাউন্ডেশন।
মূল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম পান্না। কী-নোট উপস্থাপন করেন ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (আই-সাকা) ঢাকা চ্যাপ্টার প্রেসিডেন্ট একেএম নজরুল হায়দার।
সেমিনারের নির্ধারিত আলোচক ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজের (সিসিএ) নিয়ন্ত্রক (যুগ্ম-সচিব) আবুল মনসুর মোহাম্মদ শারফ উদ্দিন, সিটিও ফোরামের সভাপতি, তপন কান্তি সরকার, সিসিএ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু।
শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, আমি খুব আনন্দিত আমার সঙ্গে সিসিএ ফাউন্ডেশনের কারো দেখা হয়নি, কথা হয়নি। তবুও তারা আমার অজান্তে অনেক আগেই এ অনুষ্ঠানের চিঠি পাঠিয়ে রেখেছেন। তাদের ধন্যবাদ। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা। এ কাজটি করছে এই সংগঠন। আগামীতে তাদের স্বেচ্ছাসেবকদের যেকোনো ধরনের সহযোগীতা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. এম পান্না বলেন, “ইন্টারনেট ব্যবহার করতে স্টপ, থিংক, কানেক্ট- এ বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। অর্থাৎ ইন্টারনেটে কোনো আকর্ষণীয় পোস্ট দেখলেও তাতে ক্লিক করার আগে থামতে হবে, তারপর ভাবুন বিষয়টি আসলে কী এবং এরপর নিরাপদ মনে হলে সেটিতে ক্লিক করুন বা সেটির সঙ্গে সংযুক্ত হোন।” এ ধরনের সচেতনা তৈরি করতে হবে এবং এটি দরকার সব ক্ষেত্রে।
আই-সাকা ঢাকা চ্যাপ্টার প্রেসিডেন্ট একেএম নজরুল হায়দার বলেন, আমাদের দেশে সচেতনতা তৈরিতে নেতৃত্বের অভাব। তিনি বলেন, সাইবার হামলা অনেকটা ভূমিকম্পের মতো। এটি হলে যেমন আমরা কিছুই করতে পারি না। কিন্তু পরে ঘুরে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি। তিনি বলেন, সাইবার হামলা মোকাবেলায় সারা পৃথিবীতে যে সংকট রয়েছে তা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ তো অনেক দূরে।
আবুল মনসুর মোহাম্মদ শারফ উদ্দিন সিসিএ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মুস্তাফিজকে উদ্দেশ করে বলেন, “সচেতনতা তৈরির এ কাজ আমার। কিন্তু আপনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সেটি করছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। আগামীতে আমরা যৌথভাবে কীভাবে কাজ করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করব।” একই ধরনের কথা বলেন তপন কান্তি সরকার।
সিসিএ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বলেন, “সাইবার অপরাধের বেশি শিকার হয় নারীরা। এবং নারীরাই বেশি হুমকির সম্মুখিন। নারীদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি যে আলাদা করে ভাবা দরকার, সেটি সরকার বা অন্য কেউই ভাবছে না। নারীর প্রতি পুরুষদের সম্মান নেই। ফেসবুকের কমেন্টগুলো দেখলেই এসব বুঝা যায়।”
প্রতিনিয়ত, বিশেষ করে নিন্ম শ্রেণীর মেয়েরা নানা ধরণের ব্ল্যাক মেইলের শিকার হচ্ছে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা দরকার। এটির কারনে একটি নিউজ অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশ হলে এক ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং একই নিউজ কাগজের পত্রিকায় প্রকাশ হলে আরেক ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটি ঠিক নয়।”
এছাড়াও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার কাগজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ফজলুল হক ভূইয়া রানা, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন নোমানী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খায়রুজ্জামান কামাল প্রমুখ।
সিসিএ ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও প্রধান সমন্বয়ক কাজী মুস্তাফিজ জানান, মাসবাপী তারা নানা কর্মসূচি নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সচেতনতামূলক পোস্টার ডিজাইন প্রতিযোগীতা, গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে সাইবার সচেতনতা তৈরিতে কর্মশালা, বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, ইত্যাদি।