দেশে প্রথম বারের মতো আয়োজিত যুব প্রতিবন্ধীদের নিয়ে জাতীয় আইসিটি প্রতিযোগিতা ২০১৬ শেষ হয়েছে। যুব প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চারটি ক্যাটাগরিতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ১৩ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হয়েছে নীলফামরীর সাইফুল ইসলাম। ১৭ জন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মো. আরমান কামাল। ১৪ জন নিউরো ডেভেলপমেন্টাল (অটিস্টিক বা অটিজম) প্রতিবন্ধীদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের রাফিদ আহসান। ১৪ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে পটুয়াখালী জেলা পবঙ্গাশিয়া গ্রামের কাজী নুসরাত সিনতিয়া। প্রত্যেক ক্যাটাগরির চ্যাম্পিয়ানকে ৪০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রধান করা হয়।
এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় হয়েছেন লালমনিরহাটে মোকলেছুর এবং তৃতীয় স্থান লাভ করেছেন বরিশালের জাহিদুল ইসলাম। ১৭ জন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন বগুড়া জেলার সামুরা ও ঢাকার সাকিব খান। নিউরো ডেভেলপমেন্টাল (অটিস্টক ও অটিজম ক্যাটাগরিতে মোট ১৪ জন প্রতিযোগি অংশগ্রহণ করেন। এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে ঢাকার দুই প্রতিযোগি। এরা হলে এস.এম. ফেরদৌস ইকরাম (ফয়সাল) এবং রিশতা গালিব। শারীরিক প্রতিবন্ধী ১৪ জনের মধ্যে গাজীপুর জেলার মো. খালেদ হোসেন দ্বিতীয় ও ময়মনসিংহ জেলার মো. শরিফুল ইসলাম তৃতীয় স্থান লাভ করেছে। প্রত্যেক ক্যাটাগরির দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী প্রতিযোগিকে যথাক্রমে ৩০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা পুরস্কার ও ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রধান করা হয়। এছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী প্রত্যেক জন প্রতিযোগিকে সার্টিফিকেট প্রেনড্রাইভ দেওয়া হয়।
গত ৪ জুন শনিবার রাজধানী ঢাকার ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক গ্রীণ রোড ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী যুব প্রতিবন্ধীদের নিয়ে জাতীয় আইসিটি প্রতিযোগিতায় সমাপণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে আইসিটি বিভাগ থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে অনেক রকমের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিবন্ধীদের জন্য আইটি সক্ষমতা উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করেছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বিষয়ক আইন পাশ করেছে যা সমাজে প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি উলেখযোগ্য সংযোজন।
তিনি বলেন, আজকের এ প্রতিযোগিতা আমাদের আইটি জগতের অগ্রযাত্রায় একটি মাইলফলক বলে আমি মনে করি। যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন তাঁদের আগাম অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিজয়ীদের মধ্য হতে একটি দল নির্বাচন করা হবে যাঁরা আন্তজাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহন করবে বলে জানান তিনি।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারা দেশে থেকে আগত মোট ৫২জন প্রতিযোগী চারটি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন। বিজয়ী প্রতিযোগিদের মধ্য হতে দক্ষতার ভিত্তিতে আগামী ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে চীনে অনুষ্ঠেয় আন্তজাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হবে।
এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের মধ্য হতে দক্ষতার ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল পরিচালিত উচ্চতর কোর্সে বিনা ফিতে অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া হবে। সকল অংশগ্রহনকারীকে আইসিটি বিভাগ ও বিসিসি আয়োজিত চাকরি মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্ব সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হার“নুর রশীদ, সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুর“ল আলম, সূচনা ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন ড. প্রাণ গোপাল দত্ত এবং বিসিসির নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম।
এর আগে সকালে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের বোর্ড অফ ট্রাস্টিসের চেয়ারপার্সন কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে¡ আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এম আর কবির এবং সূচনা ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারী জেনারেল ড: মাজহারুল মান্নান।
আয়োজক বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ দেশে প্রথমবারের মতো যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। এ প্রতিযোগিতা দেশের যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে আইসিটি চর্চার সম্প্রসারণ ঘটাবে এবং বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশের উপযুক্ত মানব সম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রস্তুতে ব্যাপক সহায়ক হবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) দেশীয় এনজিও সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) ও ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক এর সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে।