ঘুরে আসুন হিমালয় কন্যার দেশ নেপাল

গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেড এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল্লাহ আল কাফি এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও ট্যুর এজেন্সি ট্রাভেল কাইটস এর সহযোগিতায় প্রতিবেশী দেশ নেপাল ভ্রমনে অংশ নেন দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং বিজনেস বিটের সাংবাদিকরা। নেপাল থেকে ফিরে এসে ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য অংশগুলো তুলে ধরেছেন কবির হোসেন।

নেপাল আয়তনে প্রায় আমাদের সমান। ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্য, আচার ব্যবহারে এক দারুণ মিল রয়েছে আমাদের। ছোটকাল থেকে নেপাল বলতে দুটি জিনিস মাথায় আসতো। এক, ওদের বিশেষ ধরনের টুপি আর নামের শেষে ‘থাপা’ সংযুক্ত। নেপালে গিয়েও তার প্রমাণ পাওয়া গেল।

প্রথমত, দুই নেপালির কথোপকথন একটু মনোযোগ দিয়ে শুনলে বাংলা ভাষার অনেক পরিচিত শব্দের মিল পাওয়া যাবে। শুনেছি, নেপালি, বাংলা, হিন্দিসহ আরো বেশি কিছু ভাষার ব্যুৎপত্তিগত মিল রয়েছে। যাক সেসব তাত্ত্বিক কথা গত ৩-৬ ফেব্রুয়ারি গ্রে ঢাকার আয়োজনে সাংবাদিকসহ ৩৩ জনের একটি দল আমরা নেপালে অবস্থান করি। এসময় চষে বেড়িয়েছি দেশটির হাট-বাজার, মার্কেট-শপিংমলসহ দর্শনীয় স্থানগুলো। এরমধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল নাগরকোর্টে তুষার বৃষ্টি ও চন্ডিগড়ে তুষারপাত অবলোকন।

হিমালয় কন্যা হিসেবে খ্যাত পাহাড় ঘেরা দেশটি সত্যিই পর্যটক বান্ধব। আামাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির দেশ হলেও পর্যটকদের জন্য তারা সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে। একজন সাধারণ পর্যটক হিসেবে নেপালে ঘুরে যা দেখেছি তা লেখায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম। বলে রাখা ভালো প্রথমবার ভ্রমণে একদম সাদা চোখে আমি যা দেখেছি তাই তুলে ধরলাম। এখানে একেকজনের একেক রকমের অভিজ্ঞতা হতে পারে। যেমন-

ক. নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে মানুষের চোখে-মুখে কোন অস্থিরতা খুঁজে পাইনি। সবাই কেমন জানি অদ্ভুত রকমের ধীরস্থির। ঢাকার রাস্তার মতো মানুষের মধ্যে কোন তাড়াহুড়ো নেই। আমরা যেমন হাত দেখিয়ে রাস্তার মধ্যে আস্ত বাস-ট্রাক থামিয়ে ফেলি এমনটিও দেখিনি। বরং আমরা রাস্তা পার হওয়ার সময় দেখেছি অনেক দূর থেকে চালক গাড়ি থামিয়ে দিয়েছেন।

খ. একটা শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকলেও গাড়ির তেমন হর্ন কানে আসেনি। খুব বেশি দরকার নাহলে কেউই হর্ন বাজায় না। আবার আমাদের মতো কেউ আচমকা রাস্তা দিয়ে দৌঁড়ও দেয় না।

গ. শহরটির চারপাশ পাহাড় দিয়ে ঘেরা তাই সমতল ভুমি অপেক্ষাকৃত কম। যতটুকু আছে তাই অত্যন্ত ছিমছাম পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছে। রাস্তাগুলো বেশ পরিস্কার, কোন ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় চোখে পড়েনি। মানুষ নিজে থেকে আইন মেনে অভ্যস্ত। কাউকে জোর বা আইন প্রয়োগ করতে হয় না। আমাদের মতো বলতে হয় না- ‘আমি অমুক, কি করবেন দিখি’।

ঘ. আমরা যেমন পর্যটক দেখলে হা করে তাকিয়ে থাকি বা পিছু নেই সেখানে দেখলাম ভিন্নরূপ। হোক সে সাদা বা কৃষ্ণ বর্ণের। বরং নেপালিদের দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়ে নিজেই পরে তাকানো বন্ধ করে দিয়েছি।

ঙ. রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে থাকলেও তেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়েনি। যাদের দেখেছি তাদের হাতেও অস্ত্র দেখেনি। মধ্যরাতে ঘুরলেও কেউ এসে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি ‘আপনারা কারা, পরিচয় দেন’। আসলে আইন মানার জন্য যে সবসময় বলপ্রয়োগ প্রয়োজন হয়না নেপাল তার প্রমাণ।

ঙ. পাহাড় কেটে যেভাবে রাস্তাঘাট তৈরি করেছে তা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। শুধু রাস্তাঘাট না, পুরো এলাকা যেভাবে পরিকল্পিতভাবে সাজিয়েছে তা অনুকরণীয়। ওদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের পার্বত্য অঞ্চল পর্যটকদের জন্য সাজাতে পারি।

চ. একজন ভিক্ষুকও ভিক্ষা চাইতে আসেনি। বরং আমরা নিজেরাই খুঁজেছি ভিখারী কই?

ছ. আধুনিকতার নামে স্থাপত্যে নিজের ইতিহাস ঐতিহ্যকে মুছে দিয়ে দেয়নি তারা। ইতিহাসকে পাশে রেখেই বহুতল ভবন নির্মাণে তারা মনোযোগী হয়েছে। নাহলে সারাবিশ্ব থেকে পর্যটক এসে কি দেখবে, কি জানবে। আর পর্যটক না আসলে বাঁচবে কি করে পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির নেপাল।

জ. কাগজে কলমে আমরা বললেও বাস্তবে নারীর ক্ষমতায়নে তারা এগিয়ে গেছে বলে আমার মনে হলো। নারীরা আধুনিক পশ্চিমা পোশাকে বাজার ঘাট, অফিস আদালত সবই করছে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নাই।

ঝ. তিন দিকে ভারতবেষ্টিত দেশটির ভাষা, পণ্য, পোশাক, চলচ্চিত্র, লাইফস্টাইল সবকিছুতে ভারতীয় প্রভাব লক্ষ্যণীয়। মনে হয়েছে, অনেক নেপালিকে নিজ ভাষা না পারলেও হিন্দিতে পারঙ্গম।

ঞ. দেশটির আনাচে কানাচে, পর্যটন স্থানে রাজনৈতিক ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড চোখে পড়েনি। বলা বাহুল্য, শুধুমাত্র চন্দ্রগিড়ির মতো এমন একটি পর্যটন স্থান থাকলে হয়তো আমরা পুরো স্থানটিই বিলবোর্ড আর বিজ্ঞাপনের মোড়কে ঢেকে ফেলতাম।

সবশেষে নেপালকে আমার কাছে আইন মানা জাতি বলে মনে হয়েছে। আসলে শুধু শিক্ষার হার বাড়ালেই যে জনগণ আইন মানবে বিষয়টি তেমন না, এটি জীবনধারণ, এতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে থাকতে হয়। সীতার জন্মভ‚মি নেপাল তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আসুন, যে দেশের যেটা ভালো সেটা শিক্ষা নিয়ে নিজ দেশকে সাজাই।

Share This:

*

*