হুয়াওয়ে মেইট বুক

স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ২০১৬ (এমডব্লিউসি)-তে আনুষ্ঠানিকভাবে মেইটবুক ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইস উন্মোচন করল হুয়াওয়ে। আধুনিক ব্যবসার যাবতীয় কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ২-ইন-১ ডিভাইস বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। সফলতার সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন, অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও উচ্চ প্রযুক্তির মোবাইল কনজিউমার ডিভাইস তৈরির ধারাবাহিকতায় নতুন মেইটবুক ডিভাইটসটি মোবাইল প্রোডাক্টিভিটি হিসেবে সৃজনশীল এবং সৃষ্টিশীল কাজে সক্ষম।
পোর্টেবল বা বহনযোগ্য মেইটবুক ডিভাইসটি যেকোনো জায়গায় যেকোনো অবস্থায় সহজেই ব্যবহার করা যায়। আরামদায়ক ব্যবহারের জন্য ডিভাইসটি কনভার্ট বা বিভিন্ন আকারে রুপান্তরিত করা যায়। প্রিমিয়াম ক্যাটাগরি হিসেবে মেইটবুকটিকে আখ্যায়িত করেছে হুয়াওয়ে।

হুয়াওয়ের কনজিউমার বিজনেস গ্রুপের সিইও রিচার্ড ইউ বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হুয়াওয়ে প্রতিনিয়ত দৃষ্টিনন্দন ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস তৈরি করে আসছে যার ফলশ্রুতিতে বাজারে আনা হলো নতুন এই ল্যান্ডমার্ক ডিভাইস মেইটবুক।’

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মিলে মেইটবুক ডিভাইসটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ষষ্ঠ প্রজন্মের ইন্টেল কোর এম সিরিজের প্রসেসর যা দিয়ে অনায়াসে অসংখ্য কাজ একসঙ্গে করা যাবে। কুলিং এর জন্য ব্যবহৃত ফ্যান ছাড়াই অধিক পাতলা ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে মেইটবুক যাতে যেকোনো জায়গায় সহজেই বহন করা যায়।
ইন্টেল কর্পোরেশনের ক্লায়েন্ট কম্পিউটিং গ্রæপের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল ম্যানেজার ক্রিক কাউজেন বলেন, ‘একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটারের ক্ষমতা দিয়ে হুয়াওয়ে প্রিমিয়াম মেইটবুক তৈরি করা হয়েছে যাতে করে কাজের সময় কোনধরনের ল্যাগিং ঝামেলা পোহাতে না হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ২-ইন-১ ক্যাটাগরির ডিভাইস তৈরির লক্ষ্যে আমরা হুয়াওয়েকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাবো।’

উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে চালিত মেইটবুক মাইক্রোসফটের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন টুলস এতে যুক্ত করেছে যার মধ্যে আছে সর্বাধুনিক মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার এবং ডিজিটাল ব্যাক্তিগত সহকারি টুলস কর্টানা।
মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওইএম মার্কেটিং-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার হ্যান বলেন, ‘উইন্ডোজ ১০-কে অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন ও কার্যকরভাবে ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েই হুয়াওয়ের সঙ্গে আমরা যুক্ত হয়েছি। কনজিউমাররা কিভাবে ডিজাইস ব্যবহার করতে চান সে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে নজর দেয় হুয়াওয়ে। আমাদের এবং হুয়াওয়ের নতুন এই সম্পর্ক ইকোসিস্টেমে প্রিমিয়াম পোর্টেবল ডিভাইসের উন্নতিকরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি উদাহরণ।’

হুয়াওয়ে মেইটবুকের ফিচারসমূহ-
আল্ট্রা স্লিম ডিজাইন- স্মার্টফোনের ফিচারসমৃদ্ধ এবং ল্যাপটপের ক্ষমতা যুক্ত করে মোবিলিটির ধারণাকে মেইটবুকের মাধ্যমে উন্নত একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছে হুয়াওয়ে। অন-দ্যা-গো লাইফস্টাইলের সঙ্গে মিল রেখে উন্নতমানের অ্যালুমিনিয়াম ইউনিবডির তৈরি মেইটবুকটির ওজন মাত্র ৬৪০ গ্রামের মধ্যেই রাখা হয়েছে।

কীবোর্ড কেইস, কীবোর্ড এবং টাচপ্যাডে ফ্যাশন বৈচিত্রের মিশেল- পরিবেশবান্ধব নরম পিইউ লেদার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাল্টিফাংশনসমৃদ্ধ মেইটবুকের কীবোর্ড কেইস। মাত্র ১.৫ মিলিমিটারের কীষ্ট্রোক এবং কীক্যাপ ডিজাইনে বসানো হয়েছে ডিভাইসটির কীবোর্ড কেইস যাতে করে সহজেই দ্রুত নির্ভুলভাবে টাইপ করা যায়। বিল্ট-ইন মাল্টি-টাচ প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে মেইটবুকের টাচপ্যাডে।

ট্রু-টু-লাইফ কালার্স ডিসপ্লে- ১২ ইঞ্চির ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়েছে আইপিএস মাল্টি-টাচ প্রযুক্তি। এছাড়া আছে আল্ট্র-ন্যারো ফ্রেম এবং শতকরা ৮৪ ভাগ স্ক্রিন-টু-বডি অনুপাতিক মাপ। ২১৬০ী১৪৪০ রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লেতে ১৬০ ডিগ্রি কোণ থেকে দেখা যাবে হুয়াওয়ের মেইটবুক ডিভাইসে। অসাধারণ কালার প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে ট্রু-টু-লাইফ কালার্স ডিসপ্লেটিতে।

লং-লাস্টিং ব্যাটারি- স্মার্টফোন অথবা বহনযোগ্য ডিভাইসের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ব্যাটারি। পারফরম্যান্স বা সক্ষমতা আশা করলে বেশিরভাগ সময়ই ব্যাটারি সাপোর্ট দেয় না। আর এজন্যই মেইটবুকে ৩৩.৭ডব্লিউএইচ-এর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লিথিয়াম ব্যাটারি দেয়া হয়েছে। এতে একবার ফুল চার্জে টানা নয় ঘন্টা কাজ করা যাবে, এছাড়া ফুল চার্জে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে টানা নয় ঘন্টা অথবা গান শোনা যাবে টানা ২৯ ঘন্টা। পাশাপাশি রাখা হয়েছে হুয়াওয়ে বিশেষ পাওয়ার সেভিং প্রযুক্তি। মাত্র ২.৫ ঘন্টায় ফুল চার্জ করা যায় মেইটবুক। সময়ের অভাবে ফুল চার্জ না দিতে পারলেও এক ঘন্টায় ৬০ শতাংশ চার্জ অনায়াসে দেয়া যাবে।

দক্ষতা ও সক্ষমতা- উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমচালিত মেইটবুকে বিল্ট-ইন দেয়া হয়েছে মাইক্রোসফট অফিস। এছাড়া ইন্টেলের ষষ্ঠ প্রজন্মের এম সিরিজের প্রসেসরের সঙ্গে আছে ৮ গিগাবাইট র‌্যাম এবং ৫১২ গিগাবাইট পর্যন্ত সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি)।

মেইটপেন- মোর দ্যান এ স্টাইলাস শ্লোগানে মেইটপেন তৈরি করেছে হুয়াওয়ে। ২০৪৮ লেভেলের ফিচারসমৃদ্ধ মেইটপেন ডিজাইসের সঙ্গে অনেক বেশি দ্রুত কাজ করতে সক্ষম। কোনো ধরনের ল্যাগিং ছাড়াই মনের মতো করে সৃজনশীল কাজ করা যাবে মেইটপেনযুক্ত হুয়াওয়ে মেইটবুকে। এমনকি প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় লেজার রশ্নি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেইটপেনকে কাজে লাগানো যাবে। এমনকি পেনটি গাণিতিক হিসাব এবং গ্রাফিক্স ফাংশনে সমর্থন করে। ওয়ান-টাচ আনলক- ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে মেইটবুকে। স্ক্রিণ আনলক করতে এতে ব্যবহার করা হয়েছে ওয়ান-টাচ প্রযুক্তি।

কানেক্টিভিটি- আধুনিক ডিভাইসে যা যা কানেক্টিভিটি থাকা দরকার তার সবই আছে হুয়াওয়ে মেইটবুকে। ওয়াইফাই, মোবাইল হটস্পট এবং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য বিশেষ কানেক্টিভিটি ফিচার রাখা হয়েছে মেইটবুকে।
আপাতত এশিয়ায় এবং পর্যায়ক্রমে ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে গ্রে এবং গোল্ডেন রঙে পাওয়া যাবে মেইটবুক। সর্বনিম্ন ৬৯৯ মার্কিন ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ মার্কিন ডলারে হুয়াওয়ে মেইটবুক কিনতে পারবেন ক্রেতারা।

Share This:

*

*