সমাধান না হলে ডাটা কানেক্টিভিটি এবং ক্যাবল টিভি বন্ধ রাখার প্রতীকী কর্মসূচী দিবে আএসপিএবি ও কোয়াব

বিকল্প কারিগরি ব্যবস্থা ছাড়াই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সৌন্দর্য বর্ধনে ফাইবার অপটিক ক্যাবল অপসারণ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠন- আইএসপিএবি ও ক্যাবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। আইএসপিএবি-ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের একটি সম্মিলিত প্লাটফর্ম। এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে অর্থবহ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। একইসঙ্গে কোয়াব- ক্যাবল টিভি অপারেটদের একটি সংগঠন। যা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল সংযোগ দেয়ার মাধ্যমে দেশের টেলিভিশন দর্শকদের সেবা দিয়ে আসছে।

যোগাযোগ-প্রযুক্তি ছাড়াও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে ইন্টারনেট কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে করোনাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি ও বেসরকারি ভিডিও কনফারেন্স, শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস, অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধ ক্রয়, বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশে টেলিভিশন দর্শকদের দেশ-বিদেশের টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ সংবাদ, বিনোদন, শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিয়েছে ক্যাবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। করোনার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছেন। এক কথায় বললে দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রায় সবগুলো খাতে বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়তে আইএসপিএবি এবং কোয়াব বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত আগস্ট ২০২০ থেকে আইএসপি ও ক্যাবল টিভি অপারেটরদের কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই প্রধান সড়কসহ সকল সড়ক হতে ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ করা শুরু করে। এতে গত দুই মাসে আনুমানিক ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে আইএসপিএবি ও কোয়াবকে।

সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণে গৃহীত ঢাকা দক্ষিণ সিটির এই সিদ্ধান্তকে আইএসপিএবি ও কোয়াবের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানায়। তবে সেই সঙ্গে কোনো আগাম নোটিশ না দিয়ে, কয়েক লাখ ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি গ্রাহকের সেবা নিশ্চিত না করে কোটি কোটি টাকার ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ কোনো যৌক্তিক সমাধান নয় বলে মনে করে। এর ফলে কয়েক লাখ ইন্টারনেট ও কেবল টিভি গ্রাহক যেমন ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন একইসঙ্গে চলমান অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হবে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। পাশাপাশি এসব এলাকায় করোনায় সেবাদাতা হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ অনলাইন স্বাস্থ্যসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে এবং হবে। অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের ইন্টারনেট ও ক্যাবল সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এই মহারীর সময়ে বেকার হয়ে পড়বেন ১০০০টি বৈধ আইএসপি ও কোয়াবের প্রায় লক্ষাধিক কর্মীসহ ৩৩টি স্যাটেলাইট টিভিতে কর্মরত অসংখ্য সাংবাদিক ও কর্মীরা। যা এই মহামারীর সময় অমানবিক এবং একইসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার পথে অন্তরায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগ প্রদান করে আওতায় এনে গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইন্টারনেট ক্যাবল কেটে কয়েক লাখ ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির সেবাগ্রহীতার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে শহরকে গ্রামে রূপান্তরিত করছেন। যা দুঃখজনক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সিদ্ধান্তের অন্তরায়।

ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণের পর প্রায় কয়েক লাখ বিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সংযোগ পুনঃস্থাপন ও সংযোগের জন্য স্থায়ী ক্যাবল ব্যবস্থা বিষয়ে কোনো প্রকার সমাধান না করেই প্রতি আইএসপির জন্য ২৫ লাখ টাকা করে বাৎসরিক নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই যৌক্তিক বলে মনে করছে না আইএসপিএবি। এর ফলে নিবন্ধিত বৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা সংস্থাগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং আইএসপিগুলো মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে।

এছাড়া, প্রতি ২০০ মিটার অন্তর এলডিপি (লোকাল ডিসট্রিবিউটর পয়েন্ট বা পিওসি-পয়েন্ট অব সেল) বসানো উচিত হলেও মাঠ পর্যায়ে করা জরিপে আমরা দেখতে পাই, এনটিটিএন কর্তৃক তা বসানো হয়েছে প্রায় ১-২ কি.মি অন্তর। এতে ২০০ মিটারের স্থলে ক্যাবল টানতে হচ্ছে ১-২ কি.মি। যাতে মূল লক্ষ্য শহরের সৌন্দর্য বর্ধনও ব্যহত হচ্ছে।

ফাইবার অপটিক ক্যাবল পুনঃস্থাপন ও ইন্টারনেট সেবায় নিয়োজিত আইএসপিসহ কোয়াবের কর্মীরা পুলিশি হয়রানির মতো বেশ কিছু বিচ্ছন্ন ঘটনা পরিস্থিতির সম্মুখিন হচ্ছেন। যা দুঃখজনক। ভবিষ্যতে আমাদের কর্মীদের নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবা নিশ্চিত করতে পুলিশসহ সকল নিরাপত্তাকর্মীরা সার্বিক সহায়তা করবেন বলে আশা করছি।

পাশাপাশি, ক্যাবল অপসারণকে ইন্টারনেট এবং ক্যাবল টিভি ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বিবেচনা করে ক্যাবল অপসারণের পূর্বে আইএসপিএবি এবং ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আলোচনার পর আইএসপিএবি, কোয়াব এবং ডিএনসিসির যৌথ মতামতের ভিত্তিতে ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণে ৩টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে-

১. জনগণ যাতে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবা পান। ২. ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির মূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায়। ৩. শহরের কাঙ্খিত সৌন্দর্য যেন বজায় থাকে।

এই তিনটি বিষয়কে ঠিক রেখে আইএসপিএবি ও কোয়াবের চাহিদা অনুযায়ী ক্যাবল অপসারণের জন্য উত্তরাতে একটি ডাক্ট নির্মাণসহ পাকিস্তান অ্যাম্বাসি থেকে গুলশান স্যুটিং ক্লাব পর্যন্ত রোডক্রসিংয়ের ব্যবস্থাও করে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিকল্প ব্যবস্থা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-আইএসপিএবি-কোয়াব যৌথ মতামতের ভিত্তিতে যাতে ক্যাবল অপসারণের ব্যবস্থা করা হয় এ বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।

সম্মেলনে যে সব দাবি জানানো হয়,

· Last Mile Cable-এর স্থায়ী সমাধান না করা পর্যন্ত কোনো ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ যাবে না।

· আইএসপিএপি, কোয়াব, বিটিআরসি, এনটিটিএন এবং সিটি করপোরেশন সমন্বয়ে Last Mile Cable স্থাপন করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করণে একটি কমিটির মাধ্যমে সরেজমিন তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে।

· সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাসা-বাড়ি, অফিস ও ব্যাংকসহ সকল পর্যায়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

· গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবা স্বল্পমূল্যে দেয়ার লক্ষ্যে এনটিটিএনরে মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করতে হবে।

· গ্রাহক পর্যায়ে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদানে নিশ্চয়তার পক্ষে এনটিটিএনগুলো সার্বিক সক্ষমতা আছে কিনা তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আইএসপিএবি নেতারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, বর্তমান কোভিড মহামারীর এই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মাননীয় মেয়র মহোদয় অগণিত ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি অপারেটরের কথা বিবেচনা করে আমাদের উপরোল্লিখিত সমস্যাগুলো সমাধান করে ইন্টারনেট এবং ক্যাবল টিভি খাতকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। তবে পাশাপাশি আগামী ১৭ অক্টোবরের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান না করা হলে আমরা আগামী ১৮ অক্টোবর রবিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সারা দেশে বাসা-বাড়ি, অফিস ও ব্যাংকসহ সকল পর্যায়ে ইন্টারনেট ডাটা কানেক্টিভিটি এবং ক্যাবল টিভি বন্ধ রাখার প্রতীকী কর্মসূচী।

Share This:

*

*