শেষ হল তথ্য প্রযুক্তির ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস; সফলতায় বাংলাদেশ

তথ্য প্রযুক্তির বিশ্ব সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজি (WCIT) উৎসাহ উদ্দীপনা ও জাকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলো ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাজিলিয়াতে। ৩ থেকে ৫ অক্টোবর সিআইসিবি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিলের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রী গিলবার্তো কাসাব(Gilberto Kassab) এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট অব ব্রাসিলিয়ার গভর্নর রদরিগো রোলেম বার্গ ( Rodrigo Rollemberg)।

উল্লেখ্য, বিশ্ব আইটি সংস্থা ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস অ্যালায়েন্স (উইটসা)’‘ ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্ব সম্মেলন আয়োজন করে থাকে। সংশ্লিষ্ট দেশে উইটসার সদস্য এসোশিয়েশন এই সম্মেলন আয়োজনের ব্যবস্থাপনা করে থাকে। তারই অংশ হিসেবে এবছর ব্রাজিলের তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট এসোশিয়েশন (ASSESPRO) WCIT 2016 আয়োজন করে।

আইসিটি অলিম্পিক বলে জনপ্রিয় এই সম্মেলন ইতিহাসে এবারই প্রথম দক্ষিণ আমেরিকার কোন দেশে অনুষ্ঠিত হলো।“Fulfilling the Promise of the Digital Age: Challenges and Opportunities,” থিম বিষয়ক এই সম্মেলনে বক্তৃতা, প্রদর্শনী, বি২বি সভা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড- এই চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই ছিল এবারের আয়োজন। বিশ্বের ৮২ টি দেশ থেকে প্রায় আড়াই হাজার লোক এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। বিশ্ব স্বীকৃত ৬০ জনের অধিক আইটি বিশেষজ্ঞ,  তথ্য প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, উদ্যোক্তা এবং শিক্ষার্থীরা আধুনিক বিশ্ব এবং উন্নত ব্যবসা সম্পর্কে নিজেদের মতামত প্রদান করে এই সম্মেলনে। ধারণা করা যাচ্ছে, এই সম্মেলনে ভবিষ্যতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) আইসিটি ডিভিশন এবং আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সহায়তায় ২৩ সদস্যের একটি দল ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস অ্যালায়েন্স (উইটসা) এর সদস্য হিসেবে এই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এবারের সম্মেলনে বিসিএস এবং ইনফরমেশন সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোশিয়েশন অব চায়নিজ তাইপে (CISA) এর মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষীক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’র সভাপতি আলী আশফাক এবং সিসা চেয়ারম্যান ওয়াইভন্নি চিউ নিজেদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের আয়োজনে একটি বিজনেস টু বিজনেস মিটিংয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই দেশের ব্যবসা উন্নয়ন ও প্রচার এবং আইসিটি শিল্পের ক্ষেত্রে তৈরি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টিতে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়। তাইওয়ানের অর্থনীতি বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ইয়াং উয়েই ফুসহ তাইওয়ান প্রতিনিধি দল চুক্তি সাক্ষর কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হারুনুর রশিদ,বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের কো- অর্ডিনেটর ফিরোজ আহমেদ,উপ-সচিব মাহবুবা পান্না, বিসিএস এর মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার, পরিচালক মো. শাহিদ-উল-মুনির উপস্থিত ছিলেন।

এই সম্মেলনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সফলতার মধ্যে ছিল, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর প্রাক্তন সভাপতি এবং বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা সবুর খান পুনরায় ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস অ্যালায়েন্স (উইটসা) এর পরিচালক হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়া এবং দ্বিতীয় বারের মতো তিনি গ্লোবাল ট্রেড কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। উইটসার ইতিহাসে খুব কম সংখ্যক পরিচালক দ্বিতীয়বারের মতো গ্লোবাল ট্রেডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। এই সম্মান তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বাঙ্গনে বাংলাদেশের নাম একটি অনন্য মর্যাদায় নিয়ে গেছে।

ডব্লিউসিআইটি ২০১৬ সম্মেলনে আয়োজনে মর্যাদাপূর্ণ ডব্লিউআইটিএসএ মেরিট অ্যাওয়ার্ড জিতেছে বিসিএস মনোনীত সদস্য প্রতিষ্ঠান এটিআই লিমিটেড। যা বাংলাদেশের জন্য আরো একটি সাফল্য। আয়োজনের শেষদিনে নৈশভোজ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এটিআই লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক শায়খ আবু রেজার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এসময় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মেদ মিজারুল কায়েস বাংলাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। তিনি নিজের কার্যালয়ে অতিরিক্ত সচিব হারুনুর রশিদ, বিসিএস সভাপতি আলী আশফাকের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের আইসিটি খাতের প্রশংসা করেন এবং সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন।

WCIT 2016 সম্মেলনে ইন্টারনেটের জনক ভিন্টন গ্রে চের্ফ(Vinton Gray Cerf) এর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সৌজন্য সাক্ষাত হয়। যিনি ভিন্ট কার্ট নামে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নতি দেখে উৎসাহ প্রদর্শন করেন এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ‘ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

ডব্লিউসিআইটি-২০১৬ তে বাংলাদেশের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ দেশের জন্য মর্যাদা বয়ে এনেছে। ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং বিসিএস এর ভিডিও প্রেজেন্টেশন প্রদর্শন করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি দর্শকরা বেশ আগ্রহের সঙ্গে উপভোগ করেছেন।

Share This:

*

*