শিশুর অধিকার রক্ষায় মীনা গেইম

প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীতে ইউনিসেফ বিশ্বের শিশুদের জন্য সাধিত বিপুল অগ্রগতি উদযাপনের পাশাপাশি লাখ লাখ শিশুর কাছে পৌঁছানোর জরুরি তাগিদ অনুভব করছে; বিশেষ করে যাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নানা সংঘাত,সংকট, দারিদ্র্য, অসমতা ও বৈষম্যের কারণে বিপন্ন।
 
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেইক বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঝুঁকির মুখে থাকা বা সহায়তা প্রয়োজন- এমন শিশুদের সহায়তা ও ভরসা দিতেই ইউনিসেফ প্রতিষ্ঠিত। এক্ষেত্রে ওই শিশুরা কোন দেশে বসবাস করে বা যুদ্ধে ওই দেশের কী ভূমিকা ছিল তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আজও আমাদের লক্ষ্য সে সময়ের চেয়ে কোনো অংশে কম জরুরি বা কম বিশ্বজনীন নয়।”
 
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী বিপুল সংখ্যক শিশুর এতো প্রয়োজনকে সামনে রেখে আমরা প্রত্যেক শিশুর অবস্থার উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করতে পুনরায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছি।”
 
যুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপ, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে শিশুদের সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ সভায় সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকার,সুশীল সমাজ,বেসরকারি খাত ও সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় প্রদত্ত অর্থে পরিচালিত সংস্থাটি দ্রুত এর কর্মপরিধি বিস্তৃত করে১৯৫৫ সালের মধ্যে এটি বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশের শিশুদের সহায়তায় সম্পৃক্ত হয়। বর্তমানে ইউনিসেফ বিশ্বে শিশু বিষয়ক সবচেয়ে বড় সংস্থা; যা ১৯০টি দেশ ও অঞ্চলে সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছে।
 
সাম্প্রতিক কয়েক দশকে বিশ্বের দুর্গমতম অঞ্চলসমূহে ইউনিসেফের নিরন্তর সম্পৃক্ততা শিশুদের জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে সহায়ক হয়েছে। গত ২৫ বছরে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেকের বেশি কমেছে। কোটি কোটি শিশুকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়স থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশুর সংখ্যা ১৯৯০ সালের পর থেকে ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে।
 
উল্লেখযোগ্য এমন অগ্রগতি সত্ত্বেও প্রায় ২৫ কোটি শিশু সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহে বেড়ে উঠছে এবং প্রায় ৫ কোটি শিশু তাদের বাসস্থান থেকে উৎখাত হয়েছে।
 
লেইক বলেন, “আগামী ৭০ বছরের জন্য ইউনিসেফের লক্ষ্য হচ্ছে এমন এক পৃথিবী; যেখানে আমাদের আর কাজ করার দরকার পড়বে না–এমন এক পৃথিবী যেখানে প্রত্যেক শিশু হবে স্বাস্থ্যবান, নিরাপদ, শিক্ষিততারা যত্ন পাবে, সুরক্ষিত থাকবে এবং সব শিশু তাদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চটুকু কাজে লাগাতে পারবে।”
 
তিনি বলেন, “এটাই সঠিক কাজ এবং আমাদের সবার উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এটাই সবচেয়ে নিশ্চিত পথ।”
 
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক জিন গফ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ এবং দাতাগোষ্ঠীর অংশীদারদের সঙ্গে ইউনিসেফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনকালে ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার বলেন, “আমাদের পূর্বসূরিরা যা করে গেছেন আমরা তার উপকারভোগী। তবে এই ভালো কাজ এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্জন; যা এদেশে সংস্থাটির কার্যালয়কে উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে; তা অব্যাহত রাখা আমাদের নিজের এবং আমাদের অনুসারীদের ওপর বিরাট দায়বদ্ধতা তৈরি করেছে।”
 
তিনি আরও বলেন, রেকর্ড বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশকে শিশু ও মায়েদের জন্য একটি ভালো স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে ইউনিসেফ অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছে।
 
প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ইউনিসেফ বাংলাদেশ এদেশের ৩৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী; যাদের বয়স ১৮ বছরের কম, তাদের কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের জন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনতে প্রথমবারের মতো চালু করেছে মীনা গেমগুগল প্লে স্টোরে মীনা গেমফ্রি অ্যান্র্রয়েড অ্যাপ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এটি অ্যাপল মোবাইল ফোনের জন্যও তৈরি করা হবে।
 
বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় শিশু অধিকারের জন্য অ্যানিমেশন চরিত্র মীনা এখন একটি ব্র্যান্ড ও অত্যন্ত জনপ্রিয় আইকন। তাই শিশুরা যাতে বিনোদনের মধ্য দিয়ে নিজেদের জন্য কল্যাণকর বিষয়গুলো সম্পর্কে শিখতে পারে সে ব্যাপারে এই ডিজিটাল প্লাটফর্মটি সুযোগ তৈরি করবে।
 
বিনামূল্যে গুগল প্লে স্টোর থেকে এটি ডাউনলোড করা যায়। নির্দিষ্ট কোন সমস্যা চিহ্নিত করতে এটি শিশুদের সহায়তা করবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, লৈঙ্গিক সমতা, সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কে নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জনেও এটি শিশুদের সহায়ক হবে।
 

Share This:

*

*