স্বপ্নের মতোই গল্প, যার শুরুটাও স্বপ্ন দিয়ে। স্বপ্ন বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার,সফটওয়ার বাণিজ্যেউৎপাদনশীল দেশ হিসেবে পরিচিত করার। অবশ্য ইতিমধ্যে শুরুও হয়ে গেছে সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বলা হচ্ছে বাংলাদেশী বহুজাতিক কোম্পানি রিভ সিস্টেমসের কথা।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বলতে সবাই যখন আউটসোর্সিং তথা বাইরে থেকে পণ্য এনে দেশের বাজারে তা বিপণন করা বলেই মেনে নিয়েছিল প্রায়, সেসময় রিভ সিস্টেমস শুরু করে উদ্ভাবনী সব সফটওয়্যার তৈরি ও বাজারজাতকরণ।বর্তমানে বিশের ৭৮টি দেশে রয়েছে রিভের সফটওয়্যার ও সেবা ব্যবহারকারী।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে একাধিক কার্যালয়ের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরস্থ প্রধান কার্যালয়সহরিভ গ্রুপেরকার্যালয় রয়েছে ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, হং কং ও যুক্তরাজ্যে।
বিশ্বব্যাপী ২৬০০+ টেলিসার্ভিস প্রোভাইডারেরআস্থা অর্জনকারী রিভ সিস্টেমসের রয়েছে আইপি যোগাযোগের সর্বাধুনিক মাধ্যম ওয়েব-আরটিসি ও নিজস্ব লাইভ চ্যাট টুল ‘রিভ চ্যাট’সহ যাবতীয় আইপি সমাধান।
আইপি টেলিফোনি ইন্ডাস্ট্রির বাইরেও রিভের রয়েছেঅসামান্য অবদান – রিভ এন্টিভাইরাস ও সার্ভার সিকিউরিটি, রিভ প্রোপার্টিজ ও দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড লা রিভসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে নিজ নিজ মাধ্যমে। রোমিং অ্যাপ ‘আজুরা’ এবং ওয়েবসাইটে কাস্টমার এঙ্গেজমেন্ট টুল রিভ চ্যাটের মতো উদ্ভাবনী সব পণ্য নিয়ে বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছে রিভ গ্রুপ।
এই স্বপ্নের প্রতিষ্ঠাতা এম রেজাউল হাসান, গ্রুপ সিইও – রিভ গ্রুপ, যিনি জানেন সাহস আর ধৈর্য থাকলে স্বপ্ন একদিন সত্যি হবেই।
ফরাসী শব্দ ‘রিভ’ অর্থ স্বপ্ন।শুরুটা ঢাকার খিলগাঁও এলাকার একটা গ্যারেজে, ২০০৩ সালে। সেসময় মাত্র ছয়জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করে রিভ আজ বহু ভাষাভাষী ৮৬০ জনের একটি বিশাল পরিবার।
ব্যবসায়ী বাবা এ বি এম হাসান ও গৃহিণী মা রাবেয়া হাসানের তিন ছেলের মধ্যে মেজো রেজাউল হাসান খিলগাঁও সরকারি হাইস্কুল থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি পাস করেন৷
এরপর নটর ডেম কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কৃষি প্রকৌশলে স্নাতক হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি নেন।অন্য চাকরি থেকে ১৯৯৮ সালে আসেন তথ্যপ্রযুক্তি জগতে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন প্রশিকা কম্পিউটার সিস্টেমে।
‘দেশে তখন অনলাইন ইন্টারনেট চালু হয়েছে। ডট নেটের উত্থান গোটা দুনিয়ায়।’ তাই এ ক্ষেত্রটিকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রেজাউল হাসান। ২০০০ সালে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন গ্লোবাল নেটওয়ার্কে (বর্তমানে আমরা নেটওয়ার্ক)। প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলেন বিশেষায়িত করপোরেট ইন্টারনেট সংযোগদাতা হিসেবে।
তিনি বিশ্বাস করেন, স্বপ্ন আর দলগত কাজই এগিয়ে নিয়ে গেছে রিভ গ্রুপকে। তাই নিজেও কখনো ‘আমি’ বলেন না,বলেন ‘আমরা’।
২০০৩ সালে যাত্রা শুরুর সময় বুয়েট থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলে সদ্য স্নাতক আজমত ইকবালকে দায়িত্ব দিয়েছিলেনরিভের কারিগরি দিক দেখার। আজমত ইকবাল বর্তমানে রিভ সিস্টেমসের সিইও। তার কিছুদিন পরকোম্পানির সফটওয়্যার উন্নয়ন ও বিপননে যোগ দেয়া মমি মনজিল ও রায়হান হোসেনও আছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রধান হিসেবে। সঞ্জিত চ্যাটার্জী আছেন আজুরা এবং রিভ এন্টিভাইরাসের সিইও হিসেবে।
‘রেড হেরিং টপ ১০০ গ্লোবাল ২০১২’ বিজয়ী প্রতিষ্ঠান রিভ ‘২০১২ এনজিএন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘২০১১ ইউনিফাইড কমিউনিকেশন এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ছাড়াওবিভিন্ন সময় ভূষিত হয়েছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে। আর, এভাবেই প্রতিনিয়ত স্ব অবস্থান থেকেএক টুকরো বাংলাদেশ হয়ে নিজেকে বিশ্ব আঙিনায় মেলে ধরছে রিভ, হয়ে উঠছে প্রাযুক্তিক জীবনের নিত্যসঙ্গী।