মেক ইন বাংলাদেশ স্লোগানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিন-ব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭’। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বর্ণাঢ্য এ প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭’। আজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশকে প্রযুক্তি খাতের আদর্শ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার বিশাল কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি উৎপাদন/সংযোজনে ব্যবহৃত হয় এমন কাঁচামাল/যন্ত্রাংশে বিদ্যমান শুল্ক কমিয়েছি। ৯৪ ধরণের কাঁচামাল/যন্ত্রাংশে আগেকার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শুল্ক এখন মাত্র ১ শতাংশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আইটি-আইটিএস ও হার্ডওয়্যার খাতে রপ্তানীর ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। ফলে এ খাতে আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্পের বিকাশ ও এ শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, দেশে এখন বিশ্বখ্যাত স্যামস্যাং যেমন কনজ্যুামার ইলেকট্রনিক্স কারখানা স্থাপন করেছে তেমনিভাবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনও তাদের মোবাইল সংযোজন কারখানার যাত্রা শুরু করেছে। এছাড়াও, দেশে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদন/সংযোজন কারখানা স্থাপনের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান সিম্পোনি ও আমরা টেকনোলজিস এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠান এলজি ও হুয়াওয়ে। ফলে দেশীয় প্রযুক্তি পণ্যের বিশাল চাহিদা মেটাতে আর আমাদেরকে আমদানি করতে হবে না। আমরা এখন সংযোজন ও উৎপাদন শুরু করেছি। আশা রাখি, বাংলাদেশ আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে শুধু উৎপাদনই করবে না, রপ্তানি করতেও সক্ষম হবে।
হার্ডওয়্যার খাতে বাংলাদেশের সাফল্য ও অগ্রগতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে টানা তৃতীয় বারের মতো এ প্রদর্শনী আয়োজিত হতে যাচ্ছে। প্রদর্শনীতে লোকাল ম্যানুফ্যাকচারাস, আইওটি ও ক্লাউড, প্রোডাক্ট শোকেস, ইনোভেশন, মিট উইথ ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারারস, ডিজিটাল লাইফস্টাইল, মেগা সেলস, সেমিনার, বিটুবি ম্যাচমেকিং ও হাই-টেক পার্ক– এ রকম ১০টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। ১৩২টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্প, কর্মসূচি এবং উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করা হবে।
তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, জাপানসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রায় অর্ধশত খ্যাতিমান বক্তা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, তথ্যপ্রযুক্তি-ব্যক্তিত্ব এবং উৎপাদক ও উদ্যোক্তাগণও এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন। মেলাকালীন প্রতিদিন সকাল ১০.০০টা থেকে রাত ৮.০০টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রবেশ করা যাবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে নেয়া হবে ৩ স্তরের (ডিজিটাল ও ম্যানুয়াল) নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দর্শনার্থীদের জন্য ডিজিটাল সেবা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং গেমিং, সেলফি, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাও থাকছে এবারের প্রদর্শনীতে। ফলে অন্তত ৫ লাখ ক্রেতা-দর্শনার্থী এ প্রদর্শনী উপভোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রদর্শনীকে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে উন্মুক্ত করা হয়েছে www.ictexpo.com.bd–ওয়েব পোর্টালটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও (www.facebook.com/BangladeshICTexpo) প্রদর্শনী নিয়ে থাকছে নানা আয়োজন। ব্যবহার করা হবে টুইটার ও ইউটিউবসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমও। ফলে, অনলাইনেও প্রদর্শনীর স্বাদ নেবেন অন্তত ১০ লাখ দর্শনার্থী।
আগামী ১৮ই অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন যা শেষ হবে এ্যাওয়ার্ড নাইটের ঝঁমকালো আয়োজনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটিজ (সিসিএ) এ প্রদর্শনীর আয়োজনে সহযোগী। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসিও), সিটিও ফোরাম, ই-ক্যাব, বিআইজেএফ এ প্রদর্শনীর অংশীদার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম এনডিসি, বিসিএস এর সভাপতি জনাব আলী আশফাক, মহাসচিব ইঞ্জি. সুব্রত সরকার। এ সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিসিএর সদস্যবৃন্দ এবং স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। মেলার গ্লোড স্পন্সর এইচপি, টিপিলিংক ও সিলভার স্পন্সর ডাহুয়া টেকনোলজি।