ভ্যাট ট্যাক্স তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্তরায়

প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ঠদের বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে ‘প্রস্তাবিত বাজেট ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বেসিস ও দৈনিক ইত্তেফাকের যৌথ উদ্যোগে বেসিস মিলনায়তনে এই বৈঠক আয়োজিত হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, গনমাধ্যম, ব্যাংক ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনসহ বিভিন্ন খাতসংশ্লিষ্ঠরা তাদের বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সঞ্চালনা করেন বেসিস সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক শামীম আহসান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই বেসিসসহ অন্যান্য অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে বাজেট প্রস্তাবনা নিয়েছি। এগুলো সম্মিলিতভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। আমাদের দেশীয় কোম্পানির সক্ষমতা রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে আছে, সবসময় থাকবে।

বেসিস সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক শামীম আহসান বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাতে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তত ১০ শতাংশ বাজেট সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করছি। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাড়ি ভাড়ার উপর আরোপিত ভ্যাট ও সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতের ট্যাক্স রহিত করা প্রয়োজন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যাতে বিনিয়োগ আসে তার জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটার কোম্পানির উপর তিনবার ট্যাক্স আরোপের পরিবর্তে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

ইত্তেফাকে নির্বাহী সম্পাদক তারিন হোসেন বলেন, ইত্তেফাক দেশের তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় সরাসরি সম্পৃক্ত। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে ইত্তেফাকে প্রতিদিন একটি পেইজই আছে। আমরা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ঠদের প্রস্তাবনা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে তুলে ধরছি, আগামীতেও তার ধারাবাহিকতা থাকবে।

বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, এবার পার্সোনাল ইনকাম ট্যাক্স বাড়ানোর কারণে আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য বড় প্রভাব পড়বে। আগের যে সুবিধাগুলো ছিলো সেগুলোই বহাল রাখা উচিত। আর আমরা তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তারা সরকারকে সহায়তা করতে চাই, নিতে নয়। তবে তার আগে আমাদের সেই পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।

বাক্যর সহ-সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, গার্মেন্টস খাতের মতো কেনো আইসিটি খাতে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না? অথচ বিভিন্ন করারোপ করা হচ্ছে। সরকারের সাথে ইন্ডাস্ট্রির দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলোতে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন।

বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্সের সম্বনয়ক আশিকুল আলম খান বলেন, আমাদের স্থানীয় কোম্পানির নিশ্চয়তা নেই। আমাদের কয় বছরের জন্য বিজনেস প্লান করতে হবে সেটিও নিশ্চিত না। বিদেশী ও টেলিকম কোম্পানিগুলো এসে বাজার দখল করছে। অথচ দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুবিধা না দিয়ে বরং উল্টো ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- ট্রেড লাইসেন্সে ই-কমার্স নেই, কিন্তু ভ্যাট-ট্যাক্স রয়েছে।

সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার বলেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ অনেক কম। সফটওয়্যার সিস্টেম ইন্ট্রিগেশন ও সাপোর্টে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে নানা প্রনোদনা ও অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ই-ক্যাব সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, ই-কমার্সে আমার ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভ্যাট-ট্যাক্স চাই না। এছাড়া বাজেটে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাই। বিদেশীদের একচেটিয়া রাজত্ব কমিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

মাস্টার কার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মাদ কামাল বলেন, আমাদের ই-কমার্সকে একটি ইকোসিস্টেমে আনলে ট্যাক্স নিয়ে এনবিআরের যে মাথাব্যাথা তা শেষ হবে। ইন্ডাস্ট্রির সম্প্রসারণে সবাইকে অনলাইন লেনদেনে আগ্রহী করে তোলা প্রয়োজন।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কাশেম শিরিন বলেন, ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশেই এমন কিছু সফটওয়্যার আছে যা ভারতসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত অনেক দেশেই নেই। অথচ আমাদের ব্যাংকগুলো বিদেশী সফটওয়্যার কিনছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এই মনোভাব পাল্টাতে হবে।

বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ, সুশান্ত কুমার সাহা, বেসিসের সাবেক সভাপতি সারওয়ার আলম, এ তৌহিদ, অ্যাসোসিওর সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ এইচ কাফি, বেসিসের সাবেক মহাসচিব আতিক ই রাব্বানী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. রোকনুজ্জামান, ঢাকা চেম্বারের মহাসচিব এ.এইচ.এম রেজাউল কবির, সিফ ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জিয়া আহমেদ, বিডি ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন, বাগডুম ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা কামরুন আহমেদ, সূর্যমুখীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিদা হক, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তরিক রহমান, দৈনিক প্রথম আলোর ডেপুটি ফিচার এডিটর পল্লব মোহাইমেন, চালডাল ডটকমের সিওও জিয়া আশরাফ, রিভেরি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিমা আক্তার নিশা, এসএসএল ওয়্যারলেসের আশীষ চক্রবর্তী, জিঅ্যান্ডআর এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লুতফি চৌধুরী প্রমুখ।

Share This:

*

*