দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ‘বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডস’। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর ২০১৭) রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি মিলনায়তনে দেশের সম্ভাবনাময় ও উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলোর স্বীকৃতি দেয়ার এই আয়োজনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক। বেসিস সভাপতি জনাব মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেসিসের সহ-সভাপতি ও বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডস এর আহ্বায়ক জনাব এম রাশিদুল হাসান, লিডসফট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শেখ আবদুল আজিজ। আসন্ন অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস ২০১৭ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি জনাব রাসেল টি আহমেদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বেসিসের পরিচালক জনাব উত্তম কুমার পাল, জনাব সোনিয়া বশির কবির, এবারের প্রতিযোগিতার বিচারকবৃন্দ, বেসিসের সাবেক সভাপতি ও নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, উপদেষ্ঠাবৃন্দ, বেসিসের স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এই প্রথম এ ধরণের আয়োজনের জন্য বেসিসকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীর ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্য নির্ভর করছে বেসিসের সদস্যবৃন্দের সাফল্যের উপর। গত ৩০ বছরে সরকারের সহযোগিতার কারণেই আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর সর্বোচ্চ খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তেমনইভাবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় আইসিটি উপদেষ্ঠাসহ সরকারের সহযোগিতার মাধ্যমে বেসিস ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত অনন্য উচ্চতায় যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই বেসিস ও আমরা একাত্মভাবে কাজ করছি। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ একটি অন্যতম নেতৃত্বদানকারী দেশ যেখানে আইসিটি খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা, পলিসি ও পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে বেসিসের নেতৃত্বের মাধ্যমে। জাতীয় পোর্টাল, ই-গভর্ননেন্স, সরকারি দফতরগুলোতে অটোমেশনসহ বড় ধরণের কাজগুলো সবই বেসিসের সদস্যদের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে।
আমরা ২০২৮ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ট্যাক্স অবহিতকরণ, পলিসি পরিবর্তন, নগদ প্রণোদনা, দেশের জন্য যে হার্ডওয়্যার লাগে তা দেশে উৎপাদনে সর্বনি¤œ ট্যাক্স ইত্যাদি নানা কাজ করেছি। আমরা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আয়োজন করে আসছি যা এখন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশেষ স্থান পেয়েছে। বিদেশের সামনে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে। এভাবেই সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এই খাত এগিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় শিল্পবিল্পবে অংশ নিতে পারিনি। কিন্তু তৃতীয় শিল্পবিল্পব ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পেরেছি। পরবর্তী শিল্পবিল্পবেও আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে শুরু করেছে। এআর, ভিআর, ইন্টারনেট অব থিংসসহ পরবর্তী নানা প্রযুক্তির খাতে আমাদের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সেই শিল্পবিপ্লবের সাথে আমাদের ৮০ শতাংশ তরুণকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকের এই প্রতিযোগিতায় যারা ভালো করেছে তাদের মানোন্নয়নে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত করবো। তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, মেন্টরিং, বিনিয়োগে বেসিসকে সাথে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আগামী ডিসেম্বরে অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস বেসিস ও আইসিটি ডিভিশন যৌথভাবে আয়োজন করছে। সবাইকে সেই আয়োজনে অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
বেসিস সভাপতি জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রথমবার আয়োজন করেই আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। আন্তর্জাতিক মানে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজয়ী এসব প্রকল্পগুলো খুবই সম্ভাবনাময় ও উদ্ভাবনীমূলক। সেরা প্রকল্পগুলোকে আমরা অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস এর জন্য মনোনীত করবো। আমরা আমাদের প্রকল্পগুলোকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারবো। গতবার অংশ নিয়েই আমরা একটি মেরিট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম। এবার সকল ক্যাটাগরিতে আমাদের প্রকল্প থাকবে। ১৬টি দেশের কয়েক’শ প্রতিযোগির মধ্যে যদি আমরা বিজয়ী করতে পারি সেটি বাংলাদেশের জন্য গর্বের হবে। একইসাথে এসব প্রকল্প আন্তর্জাতিক বাজারেও সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডসকে সফল করার জন্য সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
বেসিসের সহ-সভাপতি ও বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডস এর আহ্বায়ক জনাব এম রাশিদুল হাসান জানান, প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় ১৭টি ক্যাটাগরিতে মোট ৩৬৫টি প্রকল্প জমা পড়ে। সেখান থেকে অভিজ্ঞ বিচারকরা ১৮১টি প্রকল্প চূড়ান্ত বাছাই পর্বের জন্য মনোনীত করেন। প্রায় ৪০ জন বিচারক সংশ্লিষ্টদের প্রেজেন্টেশন ও যাবতীয় ডকুমেন্টেশন পর্যালোচনার মাধ্যমে ৪২টি প্রকল্প বিজয়ী নির্বাচন করেছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক মানে সম্পন্ন করা হয়েছে। বেসিস প্রতিবছর এই অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। এর মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ও ভালো উদ্যোগগুলো খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এছাড়া এই প্রতিযোগিতার সেবা প্রকল্পগুলো সরাসরি অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডসে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
লিডসফট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শেখ আবদুল আজিজ বলেন, বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডস এর সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই প্রতিযোগিতা ও অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস ২০১৭ আয়োজনের জন্য বেসিসকে ধন্যবাদ জানাই। অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস এর মাধ্যমে ১৭টি দেশের সাথে যে তথ্য আদান-প্রদান হবে তাতে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের পথ প্রসারিত হবে।
এবারের বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডস এর পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো বেসিস সদস্য কোম্পানি লিডসফট বাংলাদেশ লিমিটেড।