বৃহত্তর শিল্পী এক হয়ে বিএলসিপিএসর দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করবেন-সাবিনা ইয়াসমিন

গীতিকবি, সুরস্রষ্টা, কন্ঠশিল্পী সর্বোপরি সংগীত শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ওআইপো) দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের মধ্যে এশিল্পের স্বার্থসংশ্লিষ্ট চুক্তি প্রণয়ন করে আসছে। যেই চুক্তিসমূহের মাধ্যমে প্রতিটি দেশেই সংগীত শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রেখে চলছে সোচ্চার ভূমিকা।

ঐতিহাসিকভাবে সংগীতের তীর্থভূমি বাংলাদেশে এই আন্দোলনের শুরু অনেক আগে হলেও সংগীতস্রষ্টাবা গীতিকবি, সুরস্রষ্টা, কণ্ঠশিল্পীসহ সংশ্লিষ্টদের একত্রিত করে একটি সংস্থা তৈরি করতে আমাদের সময় লেগেছে অনেক বেশি। তারপরেও আমরা বাংলাদেশ লিরিসিস্টস কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মার্স সোসাইটি (বিএলসিপিএস) নামে একটি সংগঠন তৈরি করতে সমর্থ হই।

আমরা প্রয়োজনীয় উপাত্ত ও কাগজপত্রসহ কপিরাইট রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পর এটিকে যথাযথভাবে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, বাংলাদেশের সংগীত স্রষ্টাদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টির দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় এই সংস্থাটিকে।

এই দায়িত্বের অর্থ এই নয় যে, সংস্থাটি সকল সংগীত সুরস্রষ্টার সম্পদের মালিকানা পেয়ে গেল, বরং এই দায়িত্বের অর্থ সকল সংগীত স্রষ্টাযেকোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার সংগীত প্রকাশ এবং বিপণনে প্রকৃত ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। একই সঙ্গে যথোপযুক্ত এবং আইনগতভাবে ইন্টারনেট থেকে সংগীত ডাউনলোড ও বিক্রয়, কিংবা কতবার ডাউনলোড অথবা বিক্রয় করা হচ্ছে-তা নিবিড়ভাবে মনিটর করবে বিএলসিপিএস। এছাড়া যদি কারো সৃষ্ট সংগীত পাইরেসি হয় এবং সেটি নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ও এর প্রকৃত মালিককে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবার দায়িত্বও এই সংস্থার।

আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএলসিপিএস কারো ব্যক্তিগত সংস্থা নয়, বরং এটি সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল সুরস্রষ্টার অধিকার আদায়ের একটি কল্যাণকর সংস্থা বা সোসাইটি। এর নেতৃত্বও নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনশীল। নিসন্দেহে যেকোন বিষয়ে শুরুটা সবসময়ই কঠিন এবং জটিল, কারণেই আমরা বিশেষভাবে আনন্দিত যে বাংলাদেশে এরকম একটি সোসাইটি আমরা গঠন করতে পেরেছি, যা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত হয়েছে।

বিএলসিপিএস প্রাথমিক পর্যায়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী একটি নির্দেশনার মাধ্যমে এটি পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে এই সংগঠনই সংগীত শিল্পী ও সংশ্লিষ্টদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দাবি আদায়ে মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা।

ইতোমধ্যে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপণ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, আমরা নাকি সংগীতের ক্ষেত্রে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি, যা পুরোপুরিই অপব্যাখ্যা। আসলে আমরা বিদ্যমান অরাজকতা দূর করার একটি চেষ্টা করছি মাত্র। এই বিষয়টি সংগীত স্রষ্টাদের বুঝতে, বিশ^াস করতে হবে এবং যারা এই ‘অরাজকতা’ প্রচারের সঙ্গে জড়িত তারা কিন্তু

সংগীত শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকল সংগীত স্রষ্টাদের কপিরাইট ও রয়্যালটির বিষয়টি আজ পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেন নি।

উদাহরণ হিসেবে একটি বাড়ি বা গাড়ি কেনাবেচা হলে সরকারের নির্ধারিত অফিসে যেমন রেজিষ্ট্র্রেশন করতে হয়, তেমনি সংগীতও একটি সম্পদ। এই সম্পদ মেধাগত, এটিরও রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন রয়েছে এবং সেই বিষয়টি সঠিকভাবে করা হল কিনা, প্রকৃত স্রষ্টাতার প্রাপ্য রয়্যালটি বুঝে পেল কিনা তা দেখভাল করবার জন্য আমরা আইনগতভাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছি।

আমরা আশা করছি, কেউ আর এ বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রকাশ করে শিল্পী সমাজকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না এবং সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল স্রষ্টাগণ একত্রিতভাবে তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকবেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে বিরত থাকবেন।

আমাদের প্রত্যাশা, বৃহত্তর শিল্পী সমাজ এক হয়ে বিএলসিপিএস’র দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করবেন। যার মধ্য দিয়ে দেশের সংগীত শিল্পের প্রচার ও ক্রমবিকাশ একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে সমর্থ হবে।

Share This:

*

*