বাংলাদেশে এগিয়ে হুয়াওয়ে

বিদায়ী বছর ২০১৬ সালের বার্ষিক হিসাব-নিকাশের ফলাফল সম্প্রতি বের করেছে হুয়াওয়ে। আর বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে হুয়াওয়ে ক্রমবর্ধমান দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, বিক্রির ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ২৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

মেইট এইট এবং পি নাইন-এর মতো প্রিমিয়াম ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইস ২০১৬ সালে বাজারে এনেছে হুয়াওয়ে যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির এই প্রবৃদ্ধি। গত বছরের জুন মাসে পি নাইন ডিভাইসটি বাংলাদেশের বাজারে বের হওয়ার পর তা ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনে হুয়াওয়ের জন্য। দৃষ্টি-নন্দন ডিজাইন এবং বিশেষ করে ডুয়েল লেন্স ক্যামেরার জন্য অল্প দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ এবং বিশ^ বাজারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসে পি নাইন। বছর শেষে স্বল্প বাজেটের ডুয়েল লেন্স ক্যামেরার জিআর ফাইভের ২০১৭ সংস্করণ বাংলাদেশের বাজারে অবমুক্ত করেছে হুয়াওয়ে।

গত বছরের নভেম্বরে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিএফকে’র তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট স্মার্টাফোন ইউনিট বিক্রির ক্ষেত্রে ১৪.৫ শতাংশ বাজার দখলে করে আছে হুয়াওয়ে যার আর্থিক মূল্য হিসেব করলে আসে ১৯.১ শতাংশ। আর এ হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশের তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে হুয়াওয়ে।  হুয়াওয়ে টেকনলোজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড-এর ডিভাইস বিজনেসের ডিরেক্টর ইংমার ওয়্যাং বলেন, “বিশ্ব বাজারে চলমান প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে হুয়াওয়ে। ক্রেতাদের চাহিদার উপর নির্ভর করে স্মার্টফোনে বৈচিত্রের পাশাপাশি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড, গ্লোবাল চ্যানেল এবং সেবার পরিধি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংদেশের বাজারে এই সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে হুয়াওয়ে। ২০১৭ সালেও আমরা প্রিমিয়াম ডিভাইস বাংলাদেশের বাজারে অবমুক্ত করার ক্ষেত্রে অভিনব প্রযুক্তি এবং উন্নতমান বজায় রাখার চেষ্টা করব। বাংলাদেশের মানুষরা যেনো নতুন প্রযুক্তির স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারে যে লক্ষ্যে আমরা নিত্য-নতুন পণ্য এ দেশে অবমুক্ত করার ব্যাপারে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র, অভিনব ফিচার এবং আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিৎ করব যাতে করে বাংলাদেশের মানুষ সেরা পণ্য ব্যবহার করতে পারে।”

গত ২০১৬ সালে হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজনেস গ্রুপ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছে বলে ধারণা করছে যা গত ২০১৫ সালের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। গত পাঁচ বছর ধরে প্রবৃদ্ধির এই ধারা বজায় রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। আইডিসি-এর তথ্য অনুযায়ী, হুয়াওয়ে ১৩৯ মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন রপ্তানী করেছে যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি যেখানে বিশ^ব্যাপি মোট স্মার্টফোন রপ্তানীতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.৬ শতাংশ। ফলে দেখা যাচ্ছে সবধরনের পণ্য মিলিয়ে হুয়াওয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বৈচিত্র ও নতুন প্রযুক্তি তৈরিতে গুরুত্ব

যেখানে বিশ্বব্যাপি স্মার্টফোন খাতে ধীর গতিতে এগোচ্ছে এবং ডিভাইসে নতুনত্ব আনার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা সেখানে হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজনেস গ্রুপ (সিবিজি) পণ্যে বৈচিত্রতা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করার মাধ্যমে বাজারে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে পরিণত হয়েছে।

অর্থবহ বৈচিত্রতা, সহজে ব্যবহারযোগ্য অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক নিজস্ব কাস্টমাইজ ইন্টারফেস ইএমইউআই, ডুয়েল ক্যামেরা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ আরো অভিনব প্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে হুয়াওয়ে।

বিশ্বব্যাপি পি নাইন, মেইট এইট এবং অনার এইটের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে হুয়াওয়ে। প্রথম ফ্ল্যাগশীপ হ্যান্ডসেট পি নাইন ও পি নাইট প্লাস ইতিমধ্যে ১০ মিলিয়ন বিক্রির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এছাড়া ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে মেইট নাইন বাজারে ছাড়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে মেইট এইটের চেয়ে একই সময়ের ব্যবধানে ৫০ শতাংশ বেশি বিক্রি করেছে হুয়াওয়ে।

বিস্তৃত চ্যানেল ও সেবার কারণে হুয়াওয়ে আজ প্রিমিয়াম একটি ব্র্যান্ড

উন্নত পণ্য তৈরির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপি বিস্তৃত চ্যানেল ও সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং এগুলো থেকে উন্নত সেবা দেয়ার মাধ্যমে ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে হুয়াওয়ে।

বিক্রি-পূর্ব এবং বিক্রি-পরবর্তীর জন্য বিশ্বব্যাপি পাঁচটি গ্লোবাল সার্ভিস সেন্টার বা সেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে হুয়াওয়ে যেগুলো ১০৫টি দেশে হটলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ৪৬০টি সার্ভিস স্টোর রয়েছে ৪৫টি দেশে। আইপিএসওএস-এর গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, চীন, পোল্যান্ড, মেক্সিকো, মিশর এবং আরো বেশ কয়েকটি দেশে ক্রেতা সন্তুষ্টিতে এক নম্বরে রয়েছে হুয়াওয়ে। ওপেন মার্কেট চ্যানেলের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। ওপেন মার্কেট চ্যানেলের শেয়ার ২০১৬ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে ৭১ শতাংশ যা ২০১৫ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। বর্তমানে সারাবিশ্বে হুয়াওয়ের রিটেইল নেটওয়ার্কে রয়েছে ৭০,২৩৩-এরও বেশি স্টোর।

বিশ্বব্যাপি হুয়াওয়ে ব্র্যান্ডকে নিয়ে আলোচনা, প্রতিষ্ঠানটির বাজার দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে একই পথে সমান্তরালভাবে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। গত ২০১৬ সালে ইন্টারব্র্যান্ড-এর তালিকায় সেরা ১০০টি ব্র্যান্ডের মধ্যে ৭২তম স্থানে উঠে এসেছে। এছাড়া ব্র্যান্ডজি-এর সেরা ১০০টি সেরা ব্র্যান্ডের তালিকায় ৫০তম স্থানে রয়েছে হুয়াওয়ে।

ইউরোপিয়ান হাই-অ্যান্ড মার্কেটের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে হুয়াওয়ে সিবিজি

গত ২০১৬ সালে অক্টোবরে প্রকাশিত জিএফকের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে মোট রপ্তানীর ক্ষেত্রে শুধু মিড-টু-হাই অ্যান্ড ডিভাইস রপ্তানী ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে হুয়াওয়ের। বিশ^ব্যাপি হুয়াওয়ের মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে ১১.৩ শতাংশ। ইউরোপের বাজারে হুয়াওয়ে পি নাইন ও পি নাইন প্লাস ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে বিশ্বের ৩৩টি দেশে হুয়াওয়ের মার্কেট শেয়ার ১৫ শতাংশের বেশি, ১৮টি দেশে ২০ শতাংশের বেশি। এছাড়া উত্তর-পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম ইউরোপে হুয়াওয়ের মার্কেট শেয়ার যথাক্রমে ১৫ এবং ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে প্রথমবারেরমতো চীনে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ এবং একই সঙ্গে দেশটিতে ৫০০-৬০০ মার্কিন ডলার দামের হাই-অ্যান্ড স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য ধরে রেখেছে।

Share This:

*

*