বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান আইসিটি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য লাভবান হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের তৃতীয় দিনে গত ১০ মার্চ ২০২২ তারিখে এফবিসিসিআই এবং দুবাই ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।

এই সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য এবং আইসিটি ও আইটিইএস (আইটি সংশ্লিষ্ট সার্ভিসেস) খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে বন্দর ও লজিস্টিকস, এমএসএমই, আইসিটি, তৈরি পোশাক শিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত ও হালাল খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, প্লাস্টিক, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স, হালকা প্রকৌশল, ব্যাংক-বিমা, পাট, চামড়া, পর্যটন, দক্ষতা উন্নয়ন খাতে দু দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান এফবিসিসিআই- এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজনেস কাউন্সিলের সাথে এফবিসিসিআই- এর সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন উপলক্ষে ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের উদ্দ্যেশ্যে এফবিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশে আইসিটি খাতের সম্ভাবনা ও সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন এফবিসিসিআই-এর পরিচালক ও বেসিসের প্রাক্তন সভাপতি  সৈয়দ আলমাস কবীর। সংযুক্ত আরব আমিরাত অবশ্যই বাংলাদেশের আইসিটির পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি দুর্দান্ত কেন্দ্র হতে পারে এবং এফবিসিসিআই সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বাংলাদেশের আইসিটি খাতের বিনিয়োগের দিক এবং গবেষণা ও পণ্য উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশের জন্য স্থানীয় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের অবদান রাখার মতো অনেক সুযোগও রয়েছে।

বাংলাদেশের আইসিটি খাত গত কয়েক বছরে বিশেষ করে পরবর্তী সময়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। গত অর্থবছরে আইটি/আইটিইএস রপ্তানি ছিল প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশীয় আইসিটি বাজার ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা প্রায় ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং জাতীয় জিডিপিতে ০.৭৬% অবদান রেখেছে।

বাংলাদেশের আইসিটি খাত সরকারের নীতি সহায়ক, যেমন, কর ছাড়, আইসিটি রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা, হাই-টেক পার্কগুলির দ্রুত বিকাশ, যা নির্দেশ করে যে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা খুব সহজেই এখানে বিনিয়োগ করতে পারে এবং স্থানীয় কোম্পানির সাথে যৌথ উদ্যোগ গঠন করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এবং দেশের আইসিটি খাত ইতিমধ্যেই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল গন্তব্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। স্থানীয় আইসিটি শিল্প মেট্রোরেল, পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো মেগা প্রকল্পগুলির আইসিটি অবকাঠামো এবং পরিষেবাগুলিতেও সহায়তা করছে। ইতিমধ্যে, সমগ্র বিশ্ব 4IR গ্রহণ করছে, যেখানে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছে।

আলমাস কবীর আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ৪০০টি বাংলাদেশি কোম্পানি ৮০টি আন্তর্জাতিক মার্কেটে তাদের সেবা ও পণ্য রপ্তানি করছে যার মধ্যে রয়েছে জাপান মার্কেট, যুক্তরাজ্য মার্কেট, ইউরোপ মার্কেট এবং মধ্যেপ্রাচ্যের মার্কেট।

এছাড়া ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পগুলোই এক ধাপ এগিয়ে যাবে এই সফরকে কেন্দ্র করে। যেখানে খুবই সহজেই দুই দেশের মধ্যে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি অনেকই সহজ হবে বলে জানান জনাব কবীর।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী  টিপু মুন্সী , পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন , প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা  সালমান ফজলুর রহমান এবং এফবিসিসিআই-এর সভাপতি  মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতারা।

শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখে ‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশমব ২০২২’-এর আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে  সৈয়দ আলমাস কবীর আইসিটি, ডিজিটাল কমার্স এবং স্টার্টআপে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশের স্থানীয় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রচেষ্টা নতুন নতুন উদ্ভাবনের মূল ভিত্তি বলে মন্তব্য করেন জনাব আলমাস কবীর। আমাদের প্রায় ১১ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে উল্লেখ করে জনাব কবীর বলেন, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান স্টার্টআপে বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজেরাই লাভবান হবে।  প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা  সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান  সিরাজুল ইসলাম, বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এবং বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

Share This:

*

*