ফুটবল গেমিং: এক অন্যরকম খেলার

কম্পিউটার গেমস, প্লে-স্টেশন, এক্সবক্স – এগুলো মাঠের খেলাধূলার বাইরে একেবারে অন্যরকম এক জগত, একটা ইন্ডাস্ট্রি।

এতে জড়িত রয়েছে বিরাট বিনিয়োগ, ব্যাপক প্রযুক্তিগত গবেষণা, এর সাথে যুক্ত আছেন অসংখ্য সৃষ্টিশীল উদ্ভাবক, কম্পউটার, সফটওয়্যার ও গ্রাফিক্সের বিশেষজ্ঞ।

সারা পৃথিবী জুড়ে আছেন এর লক্ষ লক্ষ ভক্ত।

ফুটবল গেমিং এর শুরুর দিকে নব্বই এর দশকে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘ওয়ার্ল্ড কাপ নাইন্টি-টু’ এবং ‘সুপারস্টার সকার সিক্সটি-ফোর’।

আজকালকার বড় সেনসেশন হলো ‘ফিফা’ এবং ‘প্রো-ইভোলিউশন সকার’ – আর ‘ফুটবল ম্যানেজার’।

ফুটবল গেমিংকে নিয়ে এ যুগের তরুণদের একটা অংশের মধ্যে একটা সংস্কৃতিই গড়ে উঠেছে বলা যায়।

এমনকি ‘আসল’ ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যেও এর ভক্ত অনেক। যেমন ইতালিয়ান ফুটবলার আন্দ্রেয়া পিরলো। তিনি বলেছেন, চাকা আবিষ্কারের পর পৃথিবীর সর্বকালের সেরা আবিষ্কার হচ্ছে প্লে-স্টেশন।

বিবিসির জুলিয়া হার্ডি বলছিলেন, এখন চলছে ফিফা এবং প্রো-ইভোলিউশনের প্রতিযোগিতার যুগ। যার ফলে গেমিং-এ এখন অবিশ্বাস্য সব উন্নতি হয়েছে। এখন এমন উচ্চস্তরের গ্রাফিক্স এসেছে যাতে কোনটা যে একটা গেম, আর কোনটা যে রক্তমাংসের খেলোয়াড়দের ‘আসল’ ফুটবল ম্যাচ – এটা বোঝাও বেশ কঠিন।

এই ফুটবল গেমের লিওনেল মেসি বা রোনাল্ডোর চেহারা, অভিব্যক্তি বা দেহের ভঙ্গি যেন হুবহু ‘আসল’ মেসি রোনাল্ডোর মতো দেখতে হয়, তার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়, এমনকি আসল খেলোয়াড়দের এনে শুটিং ও করানো হয়।

আর ফুটবল ম্যানেজার খেলায় আপনি নিজেই আপনার পছন্দমতো দলের ম্যানেজার হিসেবে খেলেয়াড় কেনাবেচা এবং দল পরিচালনা সবই করতে পারেন।

এডাম বার্টি প্রো-ইভোলিউশন সকার নির্মাতা কোম্পানির একজন ম্যানেজার। তিনি বলেন, যারা এই প্রো-ইভোলিউশন সকার কিনেছেন তারা প্রত্যেকে বছরে গড়ে ২৫০ ঘন্টা এই গেম খেলেন। এমনও অনেকে আছেন যারা বছরের সাড়ে তিন বা চার হাজার ঘন্টা এই গেম খেলেন।

মজার ব্যাপার হলো গেমে আসক্ত যারা – তাদের সবাই যে নিজেরা গেম খেলেন তা নয়, অনেকেরই নেশা হচ্ছে শুধু নামকরা কম্পিউটার গেমারদের খেলা দেখা। ইউটিউবে আপনি এমন অনেক গেমারের সন্ধান পাবেন যাদের গেম খেলার ভিডিও দেখেন লক্ষ লক্ষ দর্শক।

এদেরই একজন স্পেনসার, “আমার কয়েক মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার আছে ইউটিউবে। অনেক ভক্ত আছে। গেমিং ইতিমধ্যেই ফুটবলের ওপর একটা প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে হয়তো এমন হবে যে প্রতিটি নামকরা দলের একজন অফিশিয়াল গেমার থাকবে, তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের গেমারের খেলা হবে , এক দল হয়তো অন্যদলের গেমারদের কিনে নেবে – যেমন ফুটবলে আসল খেলোয়াড়দের কেনাবেচা দলবদল হয়।”

কিন্তু কত বড় ইন্ড্রাস্ট্রি এই ফুটবল গেমিং? গেমিং ইন্ডাস্ট্রি ম্যাগাজিন এমসিভির সম্পাদক ক্রিস স্ট্রিং বলছেন, গত বছর শুধু সেপ্টেমবর থেকে ডিসেম্বর এই সময়টুকুর মধ্যে ফিফা সিক্সটিন বিক্রি হয়েছে ২৫ লাখ। ফুটবল ম্যনেজারর নতুন সংস্করণ বিক্রি হয় দশ লাখেরও বেশি । কাজেই এটা শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা। বলতে পারেন মাঠের ফুটবল খেলাকে ঘিরে ব্যবসা যত বড়, এই গেমের ব্যবসাও প্রায় ততটাই বড়।

এর ভবিষ্যৎ কি? সলফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর এন্ডি মেয়ার বলছিলেন, গত ৪০ বছরে এই গেমিং যে কতটা বদলে গেছে তা সত্যি অবিশ্বাস্য।

“হয়তো ভবিষ্যতে আমরা যেটাকে বলি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি – সেই রকম একটা প্রায়-বাস্তব পরিবেশ আপনি কম্পিউটার ফুটবল গেমে পেয়ে যাবেন। হয়তো আপনি দর্শকের মতো খেলার মাঠের মধ্যে উপস্থিত থাকতে পারবেন। হয়তো এমন কিছু প্রযুক্তি চলে আসবে যা গেম খেলার সময় আপনার গায়ে পরতে হবে এবং কোন খেলোয়ড়কে ট্যাকল করা হলে আপনি তা অনুভব করতে পারবেন।”

তবে গেমিংএর এই প্রসারের মধ্যেও – মাঠের ফুটবল খেলা ভালোভাবেই টিকে আছে।

হয়তো এ জন্যেই যে, আসল ফুটবল খেলার আর তা দেখার আনন্দের এখনো কোন তুলনা নেই।

Share This:

*

*