দেশে প্রথমবারের মতো ‘ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট সামিট বাংলাদেশ’ নামে দিনব্যাপী এক বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ড্রাইভিং দ্য সাসটেইনেবল এজেন্ডা’ বা ‘টেকসই এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়া’। এটির উদ্যোক্তা বিল্ড বাংলাদেশ (www.buildbangladesh.org.bd)|। সম্মেলনটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম (বিবিএফ)। সম্মেলনে বেশ কয়েকটি অধিবেশনে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া চারটি প্যানেল অধিবেশনে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। বিশ্বব্যাপী ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টিং মার্কেটের গুরূত্ব অনুধাবন; বাংলাদেশে ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টিং মার্কেটের ভবিষ্যত এবং বিকাশের সম্ভ্রাবনা ও সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে বিশদ আলোচনার উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আবুল মাল আবদুল মুহিত। আরো উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইএস) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম।
সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, -“টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অজর্নের জন্য দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে হবে এবং এটি শুধুমাত্র সামাজিক বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্ভব। আর এগুলোই ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এর প্রধান লক্ষ্য।”
বিশ্বে ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট একটি নতুন ধারণা। ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট নামের এই ধারণাটি চালু করে রকফেলার ফাউন্ডেশন। গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্কের (জিআইআইএন) সংজ্ঞা অনুযায়ী, ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে কোনো কোম্পানি, সংগঠন এবং ফান্ড বা তহবিলের পক্ষ থেকে শুরু করা সেই সব বিনিয়োগ, যেগুলোর মাধ্যমে আর্থিকভাবে মুনাফা অর্জনের চেয়ে সমাজ ও পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয়টিকে বেশি বিবেচনায় রাখা হয়।
দিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য মূল প্রবন্ধ ও প্যানেল আলোচনা মিলিয়ে অনেকগুলো অধিবেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়; যাতে তাঁরা গোটা সমাজের উপকারে আসবে এমন সব প্রয়োজনীয় তথ্য ও শিক্ষা লাভে সক্ষম হন। সম্মেলনে যাঁরা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, তাঁরা হলেন ১. রোজমেরি অ্যাডিস, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট অস্ট্রেলিয়া ও চেয়ারপারসন, অস্ট্রেলিয়ান অ্যাডভাইজরি বোর্ড অন ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টিং। ২. ডেভিড ক্যারিংটন, ভাইস চেয়ারম্যান, সুপারভাইজরি বোর্ড অব ট্রিওডস ব্যাংক এনভি এবং ফাউন্ডিং নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, বিগ সোসাইটি ক্যাপিটাল, ইউকে। ৩. অভিজিৎ রায়, সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ইউনিটাস ক্যাপিটাল, ইন্ডিয়া। ৪. কোরিন প্রোস্কি, মহাব্যবস্থাপক, ডিজিটাল অ্যান্ড রিটেইল, গুড শেফার্ড মাইক্রো ফিনান্স; বোর্ড সদস্য, দ্য ডিফরেন্স ইনকিউবেটর; সাবেক প্রধান, কমিউনিটি ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংক। ৫. লুক ব্র্যানাগ্যান, পরিচালক, ফিলানথ্রপিক সার্ভিসেস, জেবিওয়ের; প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সদস্য, ইমপ্যাক্ট ১০০ সিডনি; সাবেক নির্বাহী ব্যবস্থাপক, এমএলসি কমিউনিটি ফাউন্ডেশন। ৬. শন কোল, জন জি ম্যাকলিন প্রফেসর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, হার্ভাড বিজনেস স্কুল। এই সম্মেলনে চারটি মৌলিক শিল্পের ওপর চারটি বিশেষায়িত প্যানেল আলোচনার অধিবেশন ছিল। শিল্পগুলো হচ্ছে ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট: ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন; কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা; তৈরি পোশাক (আরএমজি) এবং স্বাস্থ্য ও কল্যাণ (Health & Well-being)। বাংলাদেশের এসব খাতে ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্টের প্রভাব ও সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। যেসব বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ এই অধিবেশনগুলো সঞ্চালনা করেন তাঁরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সিনিয়র ইকোনমিক অ্যাডভাইজর ফয়সাল আহমেদ; এসিআই এগ্রিবিজনেস এর নির্বাহী পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী; বিজিএমইএ এর উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি ফারুক হাসান এবং এমারজেন্সি স্পেশালিষ্ট ও শিক্ষাবিদ ড. রেজা আলী।