ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে:পলক

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী  জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেছেন, পৃথিবী খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের এই ইন্টারনেট যুগের এ গ্লোবাল ভিলেজে মেয়েদেরকে শুধু অংক, ইংলিশ ও বিজ্ঞানে ভালো জানলে হলে হবে না তাদেরকে কম্পিউটার কোডিং ও প্রোগ্রামিং শিখতে হবে। সে জন্যে সরকার একটি আইসিটি ইকো সিস্টেম তৈরী করার জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল হ্যাকাথন ফর উইমেন-২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রতিমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ৫০০ নারী অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। আইসিটি ডিভিশন ও ‘উইমেন ইন ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যৌথভাবে এই হ্যাকাথনের আয়োজন করেছে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন  বেসিস সভাপতি মুস্তফা জব্বার,  ফারহানা এ রহমান, সহ-সভাপতি, বেসিস, শামীম হাসান, সাবেক সভাপতি, বেসিস, মো. হারুনুর রশিদ, অতিরিক্ত সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং আবদুল খায়ের পাটোয়ারী, উপদেষ্টা, উইমেন ইন ডিজিটাল এবং আছিয়া খালেদা নীলা, প্রতিষ্ঠাতা উইমেন ইন ডিজিটাল সহ আরো অনেকে।

বর্তমানে বাংলাদেশের আইসিটি খাতে নারীদের অবদান উল্লেখযোগ্য হওয়া সত্তে¡ও দেশের সকল প্রান্তের নারীদের একই সাথে আইসিটির অঙ্গনে যুক্ত করার জন্য এখন পর্যন্ত কোন আয়োজন করা হয়ে ওঠেনি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫০০ নারী এই হ্যাকাথনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেন। ৩৬ ঘণ্টা ব্যাপী এই আয়োজনে নারীরা ভিন্ন ভিন্ন ৯ টি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকে বাস্তবায়নের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবেন।
এই ৯ টি খাতের মধ্যে রয়েছে, ১. স্বাস্থ্য ও কল্যাণ, ২. কৃষি ও পরিবেশ, ৩. ব্যবসা ও বাণিজ্য, ৪. দক্ষতা অর্জন ও শিক্ষা, ৫. সংস্কৃতি ও পর্যটন, ৬. গণমাধ্যম ও বিনোদন, ৭.  নগরায়ন,  ৮. সুপরিকল্পিত বাসস্থান এবং ৯. অধীনতা ও ক্ষমতায়ন

প্রতিযোগীতা শেষে ৯ টি খাতের বিজয়ীদের জন্য মোট ২৭ টি পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে আইসিটি ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত দুইদিনব্যাপী এ ‘ন্যাশনাল হ্যাকাথন ফর উইমেন-২০১৭’ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা পর্যায় থেকে আসা নারী ডেভেলপাররা এই স্বপ্রের বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এমন একটি এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে যার লক্ষ্য হলো ইনক্লোসিভ উন্নয়ন। আর আইসিটির উন্নয়ন সকল মানুষের জন্য। যে উন্নয়নে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ থাকবে। শুধু স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপত্তা ও সামাজিক যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করবে তা নয়। আমরা চাচ্ছি নারীরা নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে, বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করবে। এখানে এই হ্যাকাথনে যে নয়টি সেক্টর নিয়ে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে এ নয়টি সেক্টরে  যে সকল সমস্যা আছে তার প্রযুক্তিগত সমাধান আনা যায় তা উদ্ভাবন করবে।
তিনি বলেন,  বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল এ তিনজন যখন নারী জাগরনের ডাক দিয়েছিলো তখনকার সমাজে পড়াশোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এতো মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিলো না। তখন বিনামূল্যে বই ছিলো না, কম্পিউটার ছিলো না, ইন্টারনেট ছিলো না। এখন বিনামূল্যে বই দেওয়া ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ফলে সারা দেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অংশগ্রহণের পরিমান বেশি। বর্তমান সরকার ১৯৯৬ তে সরকার থাকাকালীন সময়ে   প্রথম কম্পিউটার আমদানি ট্যাক্সমুক্ত করেছিলো।আগে যেখানে ১ এমবিপিএস ইন্টারনেট এর মূল্য ৭৮,০০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় নিয়ে এসছে। যা তথ্য প্রযুক্তিখাতের উন্নয়নে বিশাল ভুমিকা রাখছে। প্রতিটি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার জন্য শেখ রাসেল কম্পিউটার স্থাপন করা হচ্ছে। নারীদেরকে প্রযুক্তিতে পারদর্শি করে তোলতে আগামী দুই বছরে সারা দেশের মোট দুই লক্ষ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া সারাদেশে ঘুরেঘুরে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে টেকশই নারী উন্নয়নে কাজ করে যাবে ৭টি প্রযুক্তি বাস।
পলক আরো বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ১০০০ টি ইনোভেটিভ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম দুই বছরে কমপক্ষে ২০০টি সফটওয়্যার উন্নয়ন করা হবে যার জন্যে প্রথম চারমাসে ১ কোটি টাকা অনুদানের ড্রাফট শেষ হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালের মধ্যে উইমেন ইন আইসিটি ফর ইনিশিয়েটিভ চালু করা হবে যার আওতায় আগামী কয়েক বছরে আরো ১ লক্ষ নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষত করে তোলা হবে।

অনুষ্ঠানে মুস্তফা জব্বার বলেন, আমাদের মেয়েদের যে কোন কিছু অর্জন করে নেবার ক্ষমতা আছে। তারা খুব অল্পতেই কোনো বিষয় বুঝে নিতে পারে। এ জন্যে  বাংলাদেশের সবচেয়ে যে বড় পরিবর্তন এসেছে তা হলো শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ। তথ্য প্রযুক্তিতেও নারীরা তাদের সরব অংশগ্রহন নিশ্চিত করবে বলেই আমি মনে করি।

Share This:

*

*