জিপি অ্যাকসেলেরেটরের তৃতীয় ব্যাচের যাত্রা শুরু

গতকাল জিপি হাউজে নতুন স্টার্টআপ ব্যাচের উদ্বোধন করলো গ্রামীণফোন অ্যাকসেলেরেটর। জিপি অ্যাকসেলেরেটরের তৃতীয় ব্যাচের চার মাসব্যাপী পথচলা শুরু হলো আজ থেকে। ৬শ’ আবেদন পত্রের মধ্যে থেকে কঠোর বাছাই প্রক্রিয়া, সরাসরি সাক্ষাৎকার এবং ভাবনা উপস্থাপন পর্বের পর আজ উদ্বোধনী দিনে মনোনীত ছয়টি স্টার্টআপকে আমন্ত্রিত অতিথি ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় গ্রামীণফোন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “গ্রামীণফোন দেশের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার একটি ভালো সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে এবং জিপি অ্যাকসেলারেটর চালুর ফলে সরকারের সাথে তাদের সহযোগিতা আরো বাড়বে।”

এসডি এশিয়ার যৌথ সহযোগিতায় জিপি অ্যাকসেলেরেটর (জিপিএ) প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা দেশীয় প্রযুক্তি বিষয়ক স্টার্টআপগুলোকে সহায়তা করতে কাজ করছে। চার মাসব্যাপী কর্মসূচিতে স্টার্টআপগুলোকে কঠোর, তাৎক্ষণিক ও অত্যন্ত কার্যকরী প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। স্টার্টআপগুলো ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসেবে ১১ লাখ টাকা, জিপি হাউজে কাজ করার সুযোগ এবং তদের ব্যবসার পরিসীমা ও সময়কাল বৃদ্ধিতে প্রাসঙ্গিক শিল্পখাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের সুবিধা পাবে। নির্দিষ্ট মেয়াদ ও দলভিত্তিক এ কর্মসূচি স্টার্টআপগুলোকে বিনিয়োগযোগ্য ও বিস্তৃতি ঘাটানোর সুযোগদানের মাধ্যমে টেকসই ব্যবসায়িক মডেল নির্মাণের সুযোগ করে দিবে। আড়ম্বরপূর্ণ ডেমো ডে আয়োজনের মাধ্যমে কর্মসূচিটি শেষ হবে। যেখানে স্টার্টআপগুলো অভিজ্ঞ সব বিনিয়োগকারী, অংশীদার ও মূল ক্লায়েন্টদের সামনে নিজেদের ধারণা উপস্থাপন করবে।

অ্যাকসেলেরেটরের তৃতীয় ব্যাচের আবেদন পর্বে কিছু শক্তিশালী দল প্রতিযোগিতা করেছে। ফলে, এবার জিপি অ্যাকসেলেরেটর অতিরিক্ত একটি দলকে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জিপি অ্যাকসেলেরেটর মনে করেছে  দলটি প্রশিক্ষণ সেশনে উপস্থিত থেকে এবং জিপিএ’র সহায়তায় তাদের জনসেবামূলক সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সম্পর্ক তৈরি করতে পারবে। ছয় নম্বর দল কোনো আর্থিক সহায়তা পাবে না। তাদের ইক্যুইটিও ছেড়ে দিতে হবে না। তবে, তারা তাদের ব্যবসার মডেলের উন্নতিতে প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচিগত অন্যান্য সহায়তা পাবে।

জিপি হাউজে অ্যাকসেলেরেটরের নতুন ব্যাচকে স্বাগত জানিয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিটার বি. ফারবার্গ বলেন, ‘ডিজিটাল বিশ্বে নিজেদের তুলে ধরার ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন অ্যাকসেলেরেটর বাংলাদেশে তরুণ উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার প্ল্যাটফর্ম। এ তরুণরাই সঠিক নির্দেশনায় দেশের উন্নয়নে পরবর্তী ধাপের মাধ্যম হতে পারে।’

গ্রামীণফোনের হেড অব ট্রান্সফরমেশন কাজী মাহবুব বলেন, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা আমাদের পরিবেশের সাথে আরও বেশি মানানসই সেবা দেখতে চাই। এসব সেবা আমাদের গ্রাহকদের জীবন সহজ করে তুলবে। জিপি অ্যাকসেলেরেটর তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ইকোসিস্টেম তৈরিতে কাজ করছে। যা এ ধরনের সেবার উন্নয়নকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে।’

জিপি অ্যাকসেলেরেটরের প্রধান মিনহাজ আনোয়ার বলেন, ‘অ্যাকসেলেরেটরের তৃতীয় ব্যাচে পাঁচটি এবং অতিরিক্ত আরও একটি স্টার্টআপের একদম নতুন ব্যাচকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এবারের ব্যাচে আমরা হার্ডওয়্যার, অগমেন্টেড রিয়ালিটি, ফিনটেক ও ডিজিটাল সমাধানের এক দারুণ সমন্বয় পেয়েছি। এ সমন্বয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বেশকিছু সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করবে। আমাদের প্রত্যশা, আমাদের সহায়তায় এ স্টার্টআপগুলো বাংলাদেশের কোটি মানুষের জীবন সহজ, নিরাপদ ও আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলবে।’

এই নিয়ে এসডি এশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর আর খান বলেন, ‘পুরো এক বছরের জন্য এ উদ্যোগটি পরিচালনা করার পর আমরা আমাদের দ্বিতীয় বছরের অংশগ্রহনকারীদের জন্য তিনটি বিশেষ খাতে আরো বলিষ্ঠ প্রশিক্ষণ সহায়তা নিয়ে আসছি। আমাদের নিজস্ব উদ্যোক্ত এবং পরিকল্পনাগত সহায়তা ছাড়াও, আমরা চার মাসের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং, ফাইন্যান্স এবং প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করবো। আর আমরা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের অ্যালামনাই নেটওয়ার্কের সহায়তায় জিপি অ্যাকসেলেরেটর এ মুহূর্তে দেশের অন্যতম অ্যাকসেলেরেটর কর্মসূচি যা আমাদের দেশের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে।’

 জিপি অ্যাকসেলেরেটর উদ্যোগের তৃতীয় ব্যাচের স্টার্টআপগুলো হলো:

ক্রাউডওয়্যার

উন্নয়নশীল দেশে যোগ্যতাসম্পন্ন কন্ট্রিবিউটারদের মধ্যে ক্রাউডসোর্সি এর মাধ্যমে ক্রাউডওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় করতে সহায়তা করে। অভিনব মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাথে কাজ  দেওয়া ও এর অর্থমূল্য নির্ধারণের নতুন মাধ্যমে সমন্বয় সাধন করে তারা তুলনামূলকভাবে আরো দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং নির্ভুল সমাধানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করছে। তাদেও ক্লাউড সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকরা বিভিন্ন কাজ পোস্ট করতে পারবে যা পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ছোট কাজে বিভক্ত হয়ে যাবে ও যোগ্য কন্ট্রিবিউটরদের কাছে পৌছে যাবে। কন্ট্রিবিউটররা এসব কাজ মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে সমাধা করবে এবং মোবাইল মানি বা এয়ারটাইম এর মাধ্যমে তাদের পারিশ্রমিক গ্রহন করতে পারবে। ক্রাউডওয়্যার পরবর্তীতে সব ছোট কাজগুলো একত্রিত করে গ্রাহকদের কাছে পৌছে দিবে।

জলপাই ইলেকট্রনিক্স

আইওটি ও স্মার্ট হোম ইলেকট্রনিক পণ্যকে দ্রুত পরীক্ষামূলক পর্যায়ে নিয়ে এসে একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড তৈরিতে সহায়তা করবে জলপাই ইলেকট্রনিক্স। তারা ইতিমধ্যেই ‘স্নিফার’এর উদ্বোধন করেছে যা বাজারে বেশ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। স্নিফার একটি গ্যাস লিক চিহ্নিত করার অ্যালার্ম যা নির্ধারিত গ্যাস নিঃসরনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই সংকেত প্রদান করে। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিদিন রান্নঘরে গ্যাস লিক করার কারণে গড়ে ১৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনা রোধে স্নিফার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। জলপাই ইলেকট্রনিক্স এর আরো সেবা ও পণ্য প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে যা ক্রমান্বয়ে তুলে ধরা হবে।

ডক্টরকই ডট কম

ডক্টরকই ডট কম স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোগী এবং চিকিৎসকদের যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে। এই স্টার্টআপটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চিকিৎসকরা যেন সহজেই রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে এবং রোগীরাও যেন সহজেই চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। চিকিৎসকরা সহজেই রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করতে, কল করতে, টেক্সট পাঠাতে এবং তাদের অবহিত করতে পারবে। ডক্টরকই ডট কম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করছে যেখানে চিকিৎসকরা রোগীদের রোগ, উপসর্গ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে। টেবিল আকারে তালিকার মতো করে একটি নির্দিষ্ট প্রোফাইলের সব তথ্য সাজানো থাকবে। রোগীদের জন্য ডকটোরই ডট কম হচ্ছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখান থেকে ডাক্তার খোঁজা থেকে শুরু করে ডাক্তারদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য, ফোন নম্বর এবং দেখা করার সময় অনলাইনে বুকিং দেয়া যাবে। অনলাইনে ডাক্তাররাও এ ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আরও বেশি অবগত হতে পারবেন।

ব্যাংককম্পেয়ারবিডি

ব্যাংককম্পেয়ারবিডি’ একটি ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি ব্যাংকিং সেবা নেয়ার আগে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের চলতি মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সুবিধাদি সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। কষ্ট করে ব্যাংকে থেকে ব্যাংকে ঘুরে যাচাই করার চেয়ে ‘ব্যাংককম্পেয়াবিডি’ থেকে সহজেই ব্যবহারকারী নিজের চাহিদা অনুযায়ী সুবিধাজনক ব্যাংকের তথ্য পেয়ে যাবেন। দেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সচেতন রাখাই এ স্টার্টআপটির মূল উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট ও ব্যাংক সম্পর্কে যাচাই করার প্ল্যাটফর্মটি অনেক সহজেই ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারকারীদের জন্য সপ্তাহে সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা সেবাদান করবে ‘ব্যাংককম্পেয়ারবিডি’।

মাইক্রোটেক

শিশুদের খেলার ছলে যে কোনো কিছু শেখার অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) অ্যাপ্লিকেশন ‘নীলিমার বায়োস্কোপ’ তৈরি করেছে ‘মাইক্রোটেক’। ইতিমধ্যে গুগল প্লে স্টোর ও অ্যপলের অ্যাপ স্টোরে অ্যাপ্লিকেশনটির জন্য একটি বইও প্রকাশ করেছে তারা। এ অ্যাপ ব্যবহার করে যে কেউ বইয়ের ডিভাইসটি ধরে বইয়ের চরিত্রগুলোকে থ্রিডি আকারে দেখার সঙ্গে সঙ্গে লেখা পড়তে পারবেন। কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে শিশুরা যেনো আগ্রহী হয় এবং শিক্ষাটাকে উপভোগ করে এ লক্ষ্যেই অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করেছে ‘মাইক্রোটেক’। শিশুদেরকে বাংলা অক্ষর শেখানোর জন্য মূলত ‘নীলিমার বায়োস্কোপ’ তৈরি করা হয়েছে। শিশুদের জন্য শীঘ্রই ইংরেজি অক্ষর ও গণিত বিষয়ক বই প্রকাশ করবে এ স্টার্টআপটি। যেগুলোতে কথা বলে, এমনকি শারীরিক কসরত করে খেলতে হয় এমন সব মজার সব গেম অন্তর্ভূক্ত করা হবে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন পুস্তিকা বা ব্রশিয়ার এবং বিলবোর্ডে অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) প্রয়োগ করবে ‘মাইক্রোটেক’।

বাড়িকই

বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা বা অঞ্চলের ঠিকানা ডিজিটালকরণের লক্ষ্যে ‘বাড়িকই’ নামক দলটিকে নির্বাচিত করেছে জিপি অ্যাকসেলেরেটর। ঠিকানা খোঁজার জটিল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই ‘বাড়িকই’ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। সহজেই কোনো ঠিকানা খুঁজে বের করতে লম্বা ঠিকানাকে জিও-কোর্ডিনেট সুবিধাসম্বলিত শর্ট-কোডে রূপান্তর করে প্ল্যাটফর্মটি। এছাড়াও, এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং নির্ভুল ঠিকানা খুঁজে বের করার মাধ্যমে নিজেদের কর্মদক্ষতার বৃদ্ধি ঘটাতে পারবে। যেহেতু এটি জনসাধারণের সুবিধায় ব্যবহৃত হবে, তাই জিপিএ দলটিকে আরও নিখুঁত ও ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করার সুযোগ করে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে, অ্যাপটি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তাদের ব্যবসার সফলতা বয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

 

 

Share This:

*

*