চলছে প্রযুক্তি উৎসব বিপিও সামিট ২০১৬

জমজমাট আয়োজনে শুরু হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি উৎসব ‘বিপিও সামিট ২০১৬’। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আজ দুই দিনের এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) মহাপরিচালক হাওলিন ঝাও। প্রধান অতিথি সজীব ওয়াজেদ বলেন, তথ্য-প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়ন সূচক উপরে দিকে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। ‘বিপিও সামিট ২০১৬’ আয়োজনের মধ্যে বিশ্বের কাছে বিপিও ক্ষেত্রে বাংলদেশের সাফল্যের বিষয় তুলে ধরা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই-লার্নিং ল্যাব তৈরি করেছি। আগামীতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। সজীব ওয়াজেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার ইতিমধ্যে ই-বুক তৈরি করছে। কিছু দিনের মধ্যেই আমরা ইলেট্রনিক্স ভার্সন বই তৈরি করবো।

বিপিও সেক্টরে ২০১৮ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন আয় করবে বাংলাদেশ। প্রতি বছর ৩০ হাজার শিক্ষার্থী কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পাশ করে বের হচ্ছে। তাদের বিভিন্ন সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র তৈরি করছে সরকার।

আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) মহাপরিচালক হাওলিন ঝাও বলেন, বাংলাদেশ বিপিও সেক্টরে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারা বজায় রাখতে হবে। বিপিও সেক্টরে এগিয়ে যাওয়া দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বার্ষিক আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন আয় হবে, এর মধ্যে বিপিও ক্ষেত্রে আয় হবে ১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে সরকার। এর ফলে বাংলাদেশে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও ব্যবসার অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং এর বর্তমান বাজার মূল্য ১৮০ মিলিয়ন ডলার।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারত, শ্রীলংকা ও ফিলিপাইন বিপিও সেক্টরে সবচেয়ে ভালো করেছে। বিপিও সেক্টরে সারা বিশে^র ৬০০ বিলিয়ান ডলারের মধ্যে ভারত প্রায় ১০০ বিলিয়ন, ফিলিপাইন ১৬ বিলিয়ন এবং শ্রীলংকা ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করা।

তিনি আরও বলেন, বিপিও খাতে আয় যত বাড়বে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ততই এগিয়ে যাবে। তরুণদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে কাজে লাগাতে হবে। তরুনদের তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।

দুই দিনের আয়োজনে ২০ জন আন্তর্জাতিক তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের প্রায় ৫০ জন সফল ব্যক্তি অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন। এ সময়ে তারা তরুণদের মাঝে তাদের সফলতার কথা তুলে ধরবেন। দুই দিনের এ আয়োজনে ২৫ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর উপস্থিতি আশা করছেন আয়োজকরা। পুরো আয়োজনটি অনলাইনে সরাসারি সম্প্রচার করা হচ্ছে। ভেন্যুতে রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা।

সম্মেলনের প্রথম দিন ‘গভর্ণমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং: গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিসেস’, ‘প্রোটেকটিং ডেটা অ্যান্ড প্রাইভেসি ইন দ্য কানেক্টেড নেটওয়ার্ক ওয়ার্ল্ড’, ‘অপারচুনেটিজ ইন লোকাল অ্যান্ড গ্লোবাল বিপিও ফর ইউথ’, ‘বিগ ডেটা এনালাইসিস ফর নিউ হরাইজন ইন বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’, ‘ট্রেনিং ওয়ার্কশপ ফর কলসেন্টার এজেন্টস’ এবং ‘চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড সলিউশনস ফর ওভারকামিং হার্ডেলস ইন আউটসোসিং অব গভর্ণমেন্ট সার্ভিসেস’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় ও শেষ দিন সন্ধ্যা ৬টায় বলরুমে বিপিও সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এমপি। এছাড়া সমাপনী দিনে দেশের বিপিও খাতের সফল উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

বিপিও সামিট ২০১৬ এর গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সিলভার স্পন্সর অগমেডিক্স, আভায়া, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, মাইক্রোসফট, আইটি পার্টনার এডিএন টেলিকিম, নেটওয়ার্ক পার্টনার ফাইবার অ্যাট হোম, পার্টনার হিসাবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম, আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি), এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি), ক্যারিয়ার পার্টনার বিক্রয় ডটকম, অ্যাসোসিয়েট পার্টনার সার্ক চেম্বার অব কমার্স, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যাার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস). বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডাবি­উআইটি), সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং বাংলাদেশে আইসিটি র্জানালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ)।

Share This:

*

*