‘গ্লোবাল মোবাইল গভর্নমেন্ট (এমগভ) অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ পেয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এই সম্মানজনক পুরস্কারটি বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনভিত্তিক প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং এর উন্নয়ন সম্পর্কিত জ্ঞানের আদানপ্রদানকে উৎসাহিত করতে প্রদান করা হয়। মোবাইলের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরিকৃত বড় ধরণের ইনোভেশনগুলোকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নির্মিত সর্বশেষ প্রযুক্তির সমন্বয়, জনকল্যাণে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গভর্নমেন্ট বডি, ব্যবসায়ী এবং জনগণকে মোবাইল সেবা ও প্রযুক্তির ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে বিশ্বখ্যাত m4life.org।
বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টায় যুক্তরাজ্যের ব্রাইটনে অনুষ্ঠিত সামিটে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষে এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পুরস্কার গ্রহণের পর সমবেত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে এমন দেশ কমই আছে যারা নাগরিক সেবা প্রদানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার তাদের ২০২১ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সেক্টরে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন নজর কাড়ার মত। তাই হলফ করে বলা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন শুধু একটা টার্গেট নয়, এটা পুরো বাংলাদেশের ভিশন’।
পুরস্কার প্রাপ্তিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমরা লিপফ্রগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩১ মিলিয়ন মোবাইল ব্যবহারকারী ও ৬৩ মিলিয়ন মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। আর ৩০ মিলিয়নের হাতে রযেছে স্মার্ট ফোন। ফলে এসব নিয়ামক বিবেচনায় নিয়ে আমরা সরকারি সেবার অধিকাংশই মোবাইলের মাধ্যমে জনগণকে পৌঁছে দিতে কাজ করছি যার শুরু আমরা করেছিলাম ‘জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি’ কর্মসূচির মাধ্যমে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরকারের ৯০ শতাংশ সেবা ডিজিটালাইজ করার যে পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি, সে পরিকল্পনা মোতাবেক অধিকাংশ সরকারি সেবা মোবাইল-ভিত্তিক করতে আমরা ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল গেইম এন্ড এপ্লিকেশন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে, আমরা ইন্ডিভিজুয়ালিজম(ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা)’কে প্রাধান্য দিয়ে, প্রতিটি নাগরিককে সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে দেশকে ই-গভার্নেন্স থেকে এম-গভার্নেন্সের দিকে এগিয়ে নিচ্ছি বলেই আইসিটি ডিভিশন এ বছর এ পুরস্কার পেল। আমি এ্ই পুরস্কার বিজয়ের সকল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, আইসিটি খাত সংশ্লিষ্ট স্ট্যাকহোল্ডার এবং দেশের মানুষকে দিতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের এম-গভার্নেন্স যাত্রা একদিন বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করবে।”
বাংলাদেশের এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে এমগভ ইউকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ইব্রাহিম কুশচু বলেন, ‘বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সরকারী সেবার ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকদের দোরগোড়ায় মোবাইল ভিত্তিক প্রযুক্তির নানা সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার যাত্রা শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে তারা ব্যাপকভাবে প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিনবত্ব এবং সফলতা এই অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে জুরি বোর্ড বিবেচনা করেছে। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের মাধ্যমে খুব কম সময়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মোবাইল প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে তারা সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।’
গত ৭ হতে ৯ মে পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ব্রাইটনে তিন দিনের মোবাইল গভর্নমেন্ট ওয়ার্ল্ড সামিট-২০১৭ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এ বছর ‘জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি’ এই কর্মসূচির জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে প্রথম পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করেছে এমগভ অ্যাওয়ার্ড কমিটি। ই-গভর্নমেন্টের ভবিষ্যৎ পরিক্রমায় এ ধরণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সুদুরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। এ বছর সারা বিশে^র একশ’রও বেশী মোবাইল ভিত্তিক উদ্যোগ মনোনয়নের জমা পড়ে এবং বিচারকদের নির্বাচিত চুড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ১৫ টি দেশের বিভিন্ন উদ্যোগকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়। এই পুরষ্কারের জন্য প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের মধ্যে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, রাশিয়া, তুরস্ক, চিলি, কলাম্বিয়া, স্লোভাকিয়া, ভারত, দুবাই ও অন্যান্য। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে পুরস্কার গ্রহণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার জনাব মো: নাজমুল কাওনাইন।
উল্লেখ্য যে, ‘জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে দেশের অন্যতম মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেড। ২০১৩-১৫ সালে পরিচালিত এই কর্মসূচিতে সরকারের সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৫ শতাধিক কর্মকর্তা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সেবা প্রদানে কারিগরী ও উদ্ভাবনী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের সেবা স¤পর্কে ধারণা প্রদান করেন। সরকারের কর্মকর্তাদের থেকে প্রাপ্ত এই ধারণা থেকেই ১০০ টি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়; যার মাধ্যমে দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবা প্রদানের প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হয় এবং ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হয়। একই কর্মসূচির আওতায় ২৪৪০ জন শিক্ষার্থীকে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং বছরব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক বুটক্যা¤প ও হ্যাকাথনের মাধ্যমে তরুণদের মোবাইল ভিত্তিক উদ্ভাবনে যুক্ত করে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেয়া হয়।