আগামী ১৪ অক্টোবর রূপসা নদীতে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খুলনা নৌকাবাইচ। এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে ৩২ টি দল। খুলনার নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’র (এনএসএসকে) আয়োজনে, দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় এবং খুলনা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই উৎসবের যুগপূর্তি আসর। প্রতিযোগিতার দিন সকাল ১১ টায় নগরীর আপামর মানুষের অংশগ্রহণে শিববাড়ি থেকে হাদিস পার্ক পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিনব্যাপি এই উৎসব। এরপর ঐদিন দুপুর ২টায় রূপসা নদীর ১ নং কাস্টম ঘাটে মাননীয় অতিথিবৃন্দরা ফেস্টুন ও বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন। দুপুর দুইটা ৩০ মিনিটে ১ নং কাস্টম ঘাটে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে বিকাল পাঁচটা ৩০ মিনিটে শেষ হবে। প্রতিবার প্রতিযোগীদের ১ নং কাস্টম ঘাট থেকে বাইচ শুরু করে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু)-তে গিয়ে শেষ করতে হবে।
এবছর প্রতিযোগিতায় কয়রা, পাইকগাছা,তেরখাদা, কালিয়া, নড়াইল থেকে ১৪ টি বড় এবং ১০ টি ছোট বাইচ দল আসছে। এর মধ্যে বড় দলের প্রথম বিজয়ীরা পাবেন এক লক্ষ টাকা, দ্বিতীয় দল পাবেন ৬০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দল পাবেন ৩০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ছোটদলের প্রথম বিজয়ী দল ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দল ৩০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দল পাবেন ২০ হাজার টাকা। এবার গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর ফরিদপুর এলাকার ৮টি বাচারি নৌকা নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। সেই দলের প্রথম বিজয়ী পাবে ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দল ৩০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দল পাবেন ২০ হাজার টাকা।
আজ খুলনা নৌকা বাইচ উপলক্ষে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের খুলনা সার্কেল প্রধান মোঃ মোল্লা নাফিজ ইমতিয়াজ, গ্রামীণফোনের খুলনা সার্কেল হেড অব মার্কেটিং পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য, নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’র সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ, এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান রহিম এবং প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামান সহ অন্যান্যরা।
মোল্লা মারুফ রশীদ জানান, “প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে খুলনার ১ নং কাস্টম ঘাটে লাখ-লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন। রূপসা নদীর আশেপাশের এলাকা মেতে উঠবে প্রাণের উৎসবে । বাইচ প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা সাতটায় রূপসা ফেরিঘাটে প্রতিবারের মত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে থাকছেন জনপ্রিয় শিল্পী ঐশী, ক্ষুদে গানরাজ খুলনার রাতুল ও অন্যান্য স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ”।
এর পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা। গ্রামীণফোন গ্রাহকগণ ১২তম নৌকা বাইচের ছবি ড়িনিড়ী এ ১৫ তারিখ সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে শেয়ার করে জিতে নিতে পারেন আকর্ষণীয় পুরষ্কার। গ্রামীণফোন গ্রাহকগণ গুগল প্লে ষ্টোর থেকে ড়িনিড়ী এ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
নৌকা বাইচ সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে ইতোমধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাব, নৌ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বন বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, ট্রলার মালিক সমিতিসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার বিষয়টি গ্রামীণফোন এবং নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র শ্রদ্ধাভরে উল্লেখ করে। নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’র পক্ষ থেকে এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান রহিম বলেন, “সকলের ভালোবাসা, সহযোগিতা আর চেষ্টার ফলশ্রুতিতেই অনুষ্ঠিত হবে আমাদের খুলনাবাসীর এই সফল নৌকা বাইচ। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতা না পেলে আমরা খুলনাবাসীদের এই নৌকা বাইচ উপহার দিতে পারতাম না। অন্যদিকে এই আয়োজনে দেশের প্রধান টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন আমাদের পাশে রয়েছে এটাও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার।”। গ্রামীণফোনের হেড অব মার্কেটিং, খুলনা সার্কেল পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য বলেন, “খুলনা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। নৌকা বাইচ-ই তার একটি অন্যতম উদাহরণ। এত বড় নৌকা বাইচ বাংলাদেশের আর কোথাও হয় বলে আমার জানা নেই। আমি আশা করি আমাদের খুলনাবাসীরা শুধু এই প্রতিযোগিতা উপভোগই করবেন না; পাশাপাশি ড়িনিড়ী ফটো কন্টেস্টেও অংশগ্রহণ করবেন”।
গ্রামীণফোনের খুলনা সার্কেল প্রধান মোঃ মোল্লা নাফিজ ইমতিয়াজ বলেন, “গ্রামীণফোন সকলের ভালবাসার বিনিময়েই হয়ে উঠেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। আর এর সেবার পরিধি আরও বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমরা সবসময়েই এ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে থেকেছি। খুলনাবাসীদের একটি আনন্দঘন দিন উপহার দেয়ার জন্যই আমরা এই বাইচ প্রতিযোগিতার সাথে আছি। তাদের ভালো লাগলেই আমাদের এই আয়োজন সফল হবে। আমাদের বাইচ আয়োজনকে সফল করার উদ্দেশ্যে প্রশাসন এবং সর্বস্তরের মানুষের যে অপরিসীম চেষ্টা তা সহজেই অনুমেয়। আমি গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে সকলকে তাঁদের সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে এই আয়োজনে আমাদের সাথে নেয়ার জন্য”।
নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’র প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, “নদীমাতৃক বাংলাদেশ তার নদীর বহমানতা হারাতে বসেছে। নদীকে কেন্দ্র করে আমাদের যে জীবন ছিল তা এখন আবদ্ধ হয়েছে ব্যাস্ততার বেড়াজালে। নদীগুলো দূষিত হচ্ছে ক্রমাগত। তাই নদীকে কেন্দ্র করে আমাদের জীবনের আনন্দের একটি ঐতিহ্য নৌকা বাইচ পরবর্তী প্রজন্মেও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে”। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নৌকা বাইচ নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নৌকা বাইচের দিন সকাল ১০ টা থেকে ১ নং কাস্টম ঘাট, নতুন বাজার লঞ্চ ঘাট ও রূপসা ফেরিঘাটে সকল যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকবে। নিরাপত্তা রক্ষার্থে পুরো এলাকায় আইন রক্ষাকারী বাহিনী নিযুক্ত থাকবেন। এছাড়াও বিশেষ প্রয়োজনে মেডিকেল টীম ও ফায়ার সার্ভিস উপস্থিত থাকবেন। রূপসা ব্রীজে কোন গাড়ি পার্ক করা যাবে না। ব্রীজে শুধুমাত্র মহিলা ও শিশুরা অবস্থান করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে আজ সংবাদ সম্মেলনে নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং গ্রামীণফোন-এর পক্ষ থেকে খুলনার আপামর জনগণকে এই বাইচ প্রতিযোগিতা নদীর দু’পাড়ে উপস্থিত থেকে ধৈর্য ও সতর্কতার সাথে উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। #