ওএটিএফ এর বাধ্যবাধকতা তুলে নিল বাংলাদেশ ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ড ও প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে Online Transaction Authorization Form (OTAF) বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্কুলার জারি করে তা গতকাল প্রত্যাহার করে নিয়েছে । মুলত বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর অনুরোধের প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারটি প্রত্যাহার করে নেয়।

গত ১৪ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে জারিকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৬ নং সার্কুলারে OTAF বাধ্যতামূলক করা হয়। এর ফলে বেসরকারি ব্যাংক গুলোর ইস্যুকরা ক্রেডিট কার্ড গুগল, ফেসবুকসহ আন্তর্জাতিক পোর্টালে ডিজিটাল কেনাকাটা করার সুযোগ স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। এতে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে ট্রাভেল কোটায় বরাদ্দ ডলার থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং খাতে মূল্য পরিশোধের সুযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল যা দেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মতো একটি সম্ভাবনাময় খাতের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

এ ব্যাপারে গত ১৭ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল-এর সাথে এবং আজ (রবিবার) সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির ও জেনারেল ম্যানেজার জনাব খুরশিদ ওয়াহাব-এর সাথে দুটি পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ (রবিবার) অনুষ্ঠিত সভায় ১১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের হেড অব কার্ডস ও হেড অব রিটেইল ব্যাংকিংসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেসিস এর পক্ষে উভয় সভায় বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর এর নেতৃত্বে বেসিস সহ-সভাপতি শোয়েব আহমেদ মাসুদ ও বেসিস-এর ডিজিটাল মার্কেটিং স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার বৈঠকে OTAF-এর বাধ্যবাধকতা কেন ভোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে এবং ব্যাংকগুলো কী কী অসুবিধার সম্মুখিন হবে, এ নিয়ে বিস্তারিতভাবে ফলপ্রসু আলোচনা হয়। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তারা উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট জটিলতা ও নেতিবাচক প্রভাব অনুধাবন করেন এবং যত শিঘ্র সম্ভব এ সমস্যা সমাধানে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য যে একই দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তরফ থেকে আরেকটি সার্কুলার জারি করা হয়, এবং সেখানে OTAF-এর বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হয়। এত অল্প সময়ে পাল্টা সার্কুলার জারির ঘটনা বোধহয় এ-ই প্রথম! এই নতুন নির্দেশের ফলে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তা নিরসন হলো।

এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন যে, ‘এই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমি বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাবৃন্দকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। একইসাথে সকল ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই বেসিস-এর সাথে থাকার জন্য।’ একইসাথে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনায়েদ আহমেদ পলককেও আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ২০০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক এবং গুগলসহ অন্যান্য বিদেশি অনলাইন বিজ্ঞাপনী চ্যানেলে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই অর্থের একটা বড় অংশ পরিশোধ করা হয় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত ট্র্যাডিশনাল ক্রেডিট কার্ড দ্বারা। এই সমস্ত কার্ডে ট্রাভেল কোটায় বছরে ১২০০০ ডলার পর্যন্ত খরচের সুবিধা থাকে। বিভিন্ন দেশী ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ছোটো এজেন্সি, ই-কমার্স ও এফ-কমার্স মডেলের অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা ব্যবহার করেই গুগল এবং ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের মূল্য পরিশোধ করে থাকে।

Share This:

*

*