সম্প্রতি ব্যাংককে আইটিইউ টেলিকম ওয়ার্ল্ড ২০১৬-তে ব্রডব্যান্ড সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে ‘এশিয়া প্যাসিফিক এক্সচেঞ্জ অন ব্রডব্যান্ড রেগুলেশন এ্যান্ড পলিসি শীর্ষক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম যৌথভাবে আয়োজন করেছে হুয়াওয়ে এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়ন (আইটিইউ)। দ্রত গতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ সবখানে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য ‘ওয়াইট পেপার অন ব্রডব্যান্ড রেগুলেশন এ্যান্ড পলিসি ইন এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওন: ফ্যাসিলিটেটিং ফাস্টার ব্রডব্যান্ড ডিপ্লয়মেন্ট’ অবমুক্ত করে সেশনে অংশ্রগ্রহণকারীরা। আরো উন্নয়ন ও দ্রুত গতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক দেশব্যাপি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে দরকার বিস্তৃত ব্রডব্যান্ড নীতিমালা, এমনটি জানালেন প্রোগ্রামে উপস্থিত বক্তারা।
এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন আইটিইউ-এর সাধারন সম্পাদক হউলিন ঝাও। এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে আইটিইউ-এর সহযোগি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনুযায়ী আইটিইউ-এর সদস্য হিসেবে সহযোগিতা করে আসার জন্য হুয়াওয়েকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। তিনি আরো উল্লেখ করেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের অবকাঠামোতে গুরুত্ব দেয়া। ব্রডব্যান্ড এখন মানুষের মৌলিক চাহিদায় পরিণত হয়েছে। ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ও অ্যাপ্লিকেশন ছাড়া একটি মূহুর্ত কল্পনা করা আমাদের জন্য অস্বাভাবিক হয়ে দাড়িয়েছে। আর তাই সরকারের উচিৎ ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের ব্যাপারে গঠনমূলত নীতিমালা প্রণয়ন করা।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে উন্নয়নের ধারা অনেকটাই অসামঞ্জস্য এবং এ অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের তারতম্য অনেক বেশি বলে জানালেন হুয়াওয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিন ইউঝি। জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং সিংগাপুর ৯৫ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিয়ে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বাংলাদেশ, মায়ানমার ও কম্বোডিয়ায় মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত। অবকাঠামোগত প্রবৃদ্ধি এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বাড়ানো ক্ষেত্রে উক্ত দেশগুলোর সরকারের উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বক্তারা। জিন বলেন, “দেশের কৌশলগত পরিকল্পনায় ব্রডব্যান্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিৎ। সরকারের উচিৎ টেলিকম এবং অবকাঠামো যেমন- সাবমেরিন কেবল, ডাটা সেন্টার ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বিনিয়োগ করা।”
এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অবমুক্ত করা ওয়াইট পেপারটি অর্থই হলো বিভিন্ন দেশের সরকারকে অবকাঠামো উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়া যাতে করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং ব্রডব্যান্ড নির্ভর খাতের নীতিমালা আরো উন্নত করা যায়। পাশাপাশি সরকারের উচিৎ এ সংক্রন্ত নীতিমালা অনেক বেশি সহজ করা, যাতে করে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারে। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি সংক্রান্ত অবকাঠামো তৈরি, আন্তর্জাতিক ফাইবার লিংক, প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, বিনিয়োগকারী ও অবকাঠামো নির্মাতা, স্পেকট্রাম অবমুক্তকরণ ও এর সুষ্ঠু ব্যবহারের ব্যাপারে বিশদভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সরকারকে।
ডিজিটাল অর্থনীতি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় দেশব্যাপি ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেয়া অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন বক্তারা। পর্তুগাল, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার নিয়ন্ত্রক কর্তপক্ষগণ নিজ নিজ দেশের ব্রডব্যান্ড উন্নয়ন, প্রতিবন্ধকতা এবং সমাধান যেগুলো তারা ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক উন্নয়নে আরো বেশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন সবাই। বিভিন্ন খাতের জন্য গঠনমূলক নীতিমালা এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের উন্নয়ন সম্ভব হবে।
আয়োজনটির স্পন্সরদের ভাষ্যমতে, আন্তর্জাতিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সল্যুশনসের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। তথ্য-প্রযুক্তি খাত সংক্রান্ত উপদেষ্টা, দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সফল ব্রডব্যান্ড সল্যুশনসের ব্যাপারে বিশদ ও সুক্ষ্ম অভিজ্ঞতা আছে প্রতিষ্ঠানটির এবং পাশাপাশি বিশ্বব্যাপি টেলিযোগাযোগ সিস্টেম পরিচালনা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও হুয়াওয়ের আছে গঠনমূলক কর্মদক্ষতা। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক বিস্তৃতকরণে হুয়াওয়ে সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করতে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, উক্ত এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সরকারি কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট খাতের নেতা এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মিলে প্রায় ২০০জন অংশ নিয়েছেন। গত ১৯৭১ সালে প্রথম আইটিইউ টেলিকম ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল টেলিযোগাযোগ এক্সপোর ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনের মধ্যে একটি। চলতি বছরের আইটিইউ টেলিকম ওয়ার্ল্ড-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘বেটার সুনার। অ্যাক্সিলারেট আইসিটি ইনোভেশন টু ইমপ্রুভ লাইভস ফাস্টার।’