‘ফিউচার ইন মোশন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রদর্শনী বেসিস সফটএক্সপোর উদ্বোধন হয়েছে। এগারতম এ মেলার আয়োজন করেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল, এমপি ও তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি। বেসিস সভাপতি জনাব মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেসিসের পরিচালক ও প্লাটিনাম স্পন্সর মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সোনিয়া বশির কবির এবং বেসিসের পরিচালক ও বেসিস সফটএক্সপো ২০১৭ এর আহবায়ক জনাব সৈয়দ আলমাস কবীর।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসিস জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি জনাব রাসেল টি আহমেদ, সহ-সভাপতি জনাব এম রাশিদুল হাসান, জনাব ফারহানা এ রহমান, বেসিসের পরিচালক জনাব উত্তম কুমার পাল, জনাব মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, জনাব রিয়াদ এস এ হোসেন, বেসিসের সাবেক সভাপতিবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, বেসিস সফটএক্সপো ২০১৭ এর আয়োজক কমিটি, স্পন্সর ও পার্টনার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, মিডিয়া ও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।
প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তি খাত বর্তমান সময়ে সকল সমাজের উন্নয়নের চালিকা শক্তি। বেসিস ১৯৯৭ সাল থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন পরিবেশ তৈরি করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে। তাদের এই যাত্রাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে এখন প্রয়োজন প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও বিনিয়োগ। তিনি আরো বলেন, আইসিটিবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সফটওয়্যার খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সফটওয়্যার ও টেকনোলজি প্রত্যেকের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। এখন সময় এসেছে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সঙ্গে সফটওয়্যার খাতকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।
বিশেষ অতিথি আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পৃথিবী সৃষ্টির পর নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর একটা করে পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তিতে পরিবর্তন এসেছে। পৃথিবীতে এখন তথ্যপ্রযুক্তি খাত তিন ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের। তাই সেই বাজার ধরতে এবং দেশের বাজারকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে বেসিস যে কাজ করছে তা অসামান্য। দেশে আইসিটি খাতের আয় বাড়াতে স্থানীয় বাজারকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয় চাহিদা পূরণে কাজ করার পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। এজন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বেসিসকে তার সম্ভাব্য সকল সহায়তা করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে বেসিসকে সঙ্গে নিয়ে সফটওয়্যার খাতে ২০১৮ সাল নাগাদ ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে এ খাতে ১ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে আইসিটি শিল্প গড়ে তোলার কাজ চলছে। আইসিটি খাতে সবচেয়ে বড় প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই খাতে ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে। দেশের তরুণরা আগামীতে নেতৃত্ব দেবে। তাদের মধ্য থেকে উদ্যেক্তা তৈরী করার লক্ষ্যেই সফটএক্সপোর আয়োজন করা হয়।
বেসিসের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ১৯৯৭ সালে বেসিস যাত্রা শুরু করে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বেসিস এখন তথ্যপ্রযুক্তিতে নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে সফটওয়্যার খাতে রপ্তানি আয় ১৫৪ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু বেসিস সদস্যভ‚ক্ত প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুসারে এখাতে আয় ৫৯৪ মিলিয়ন ডলার। এছাড়াও আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানি আয় যোগ করলে রপ্তানি আয় ৭০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এই হিসেবের পার্থক্যের কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সি-ফর্ম। এই ফর্মে ৯ হাজার ৯৯৯ ডলার পর্যন্তও যারা উপার্জন করে তাদেরকে তালিকভুক্ত করা হয় না। এছাড়াও সফটওয়্যার সেবা খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে যা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে যুক্ত হয় না। পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার উপার্জন আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার উপার্জন সমান। এতে মেধার শ্রম রয়েছে। একদিন সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত হবে আইসিটি।
প্রদর্শনীতে দেশ বিদেশের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক আইটি সংগঠন, স্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানি শতাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবার প্রদর্শন করবে। বেসিস সফটএক্সপো ২০১৭-তে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তা, সরকারি নীতিনির্ধারক, শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি ও সাধারণ দর্শকসহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সফটএক্সপো ২০১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।এবারের মেলাকে ভাগ করা হয়েছে বিজনেস সফটওয়্যার জোন, আইটিইএস এবং বিপিও জোন, মোবাইল ইনোভেশন জোন ও ই-কমার্স জোন এই ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় প্রসারে থাকছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিজনেস ম্যাচমেকিং সেশন। বাড়তি সুবিধা হিসেবে থাকবে বিজনেস লাউঞ্জ। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ইভেন্টের মধ্যে রয়েছে লিডারস মিট, ডেভেলপার কনফারেন্স, টেক উইমেন কনফারেন্সসহ নানা আয়োজন। শিশুদের জন্য থাকছে কোডিং প্রোগ্রাম।সফটএক্সপোতে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে অন্তত ২০টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সফটএক্সপোতে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে ১০টির অধিক টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হবে। সফটএক্সপোতে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার রফতানি বাড়াতে আন্তর্জাতিক বিজনেস টু বিজনেস ম্যাচমেকিংয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া থাকছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহীদের চাকরির সুযোগ করে দিতে থাকছে এন্টারপ্রেওনারশীপ অ্যান্ড ক্যারিয়ার ইন আইটি’ শীর্ষক আয়োজন। মেলায় আগত দশর্নার্থীরা পাবে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা।(http://www.softexpo.com.bd) ভিজিট করে আগ্রহীরা নিবন্ধন করতে পারবেন। সেখানে প্রদর্শনীর বিস্তারিত তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া প্রদর্শনীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ (https://www.fb.com/BASIS.SoftExpo/) থেকে আপডেট পাওয়া যাচ্ছে। বেসিস সফটএক্সপোর অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও উন্মোচন করেছে আগ্রহীরা গুগল প্লে স্টোর থেকে https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bd.softexpo অ্যাপটি ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে পারবেন। এবারের প্রদর্শনীর সকল আয়োজন, কনফারেন্স, সেমিনার, টেকনিক্যাল সেশন অনলাইনে চারটি চ্যানেলের মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার করবে অনলাইনভিত্তিক ডিজিবাংলা টেলিভিশন।