আইসিটি ডিভিশনের সাথে কাজ করবে আইবিএম

দেশীয় স্টার্ট-আপদের জন্য আইবিএম গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনিওর প্রোগ্রাম চালু করল সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস(আইবিএম) কর্পোরেশন। এ উপলক্ষ্যে আজ সকালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আইসিটি টাওয়ারস্থ দপ্তরে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। আইবিএম গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনিওর প্রোগ্রাম এর আওতায় স্টার্ট-আপ ও উদ্যোক্তাদেরকে আইবিএম ক্লাইড ও আইবিএম ক্লাউড প্লাটফর্ম ব্লুমিক্স এর ওয়াটসন এপিআইসমূহ(এপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস) ব্যবহার করতে পারবে।  আইবিএম এর সুবিশাল বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের বড় বড়  গ্রাহক, পরামর্শক এবং উদ্ভাবন কেন্দ্রগুলোর সাথে দেশীয় ঊদ্ভাবনগুলোকে ত¦রিৎ সংযোগ স্থাপন, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে।

চুক্তির আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি দল এবং আইবিএম এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের চেয়ারম্যান ও সিইও র‌্যান্ডি ওয়াকার এর নেতৃত্বে আইবিএম প্রতিনিধি দল এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় আইবিএম প্রতিনিধি দলের সদস্যগণ বলেন, আইবিএম আইসিটি ডিভিশনের সাথে অংশীদারিত্বে ভিত্তিতে কাজ করতে চায়। কারণ, বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি এবং সরকারের প্রচেষ্টার ফলে বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং বর্তমানে স্টার্ট-আপগুলো তাদের উদ্ভাবন প্রদর্শনে অনেক ধরণের প্লাটফর্ম পাচ্ছে। আইবিএম এর বৈশ্বিক কর্মসূচির ফলে এখন স্টার্ট-আপগুলো তাদের উদ্দেশ্য সাধনে এখন আরো বেশী সমর্থন ও সহযোগিতা পাবে এবং উপযুক্ত স্টার্ট-আপগুলো আগামী ১ বছরের জন্য প্রতিমাসে ১ হাজার ডলার সমমূল্যের আইবিএম ক্লাউড ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এছাড়াও ব্যবসা চালু করতে তাৎক্ষণিকভাবে অবকাঠামো ব্যবহারের সুবিধাসহ স্টার্ট-আপগুলোকে তাদের উদ্যোগসমূহ কোডিং, বিল্ডিং, স্কেলিং এবং বাজারে উপস্থাপন করতে সহায়তা করবে। এই কর্মকান্ড স্টার্ট-আপদেরকে আইবিএম এর অতি মূল্যবান এন্টারপ্রাইজ গ্রাহকদের(যাদের অনেকেই ক্রমাগতভাবে শিল্পের বিকাশে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে নতুন উদ্যোগ খুঁজে নেয়) সাথে সংযোগ ঘটিয়ে দেবে।  পাশাপাশি, আরো অতিরিক্ত কিছু জিজ্ঞাসা ও অনুমোদনের পর মনোনীত স্টার্ট-আপগুলো আগামী এক বছরের জন্য প্রতিমাসে ১০ হাজার ডলার মূল্যের আইবিএম ক্লাউড ব্যবহারের সুযোগ পাবে।

এ সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি দলের সদস্যগণ আইবিএম টিমকে অবহিত করেন যে, কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে বিগত আট বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাংলাদেশ ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত করেছে। বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতিতে ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সকল উপজেলাকে ফাইবার অপটিক কেবলের আওতায় নিয়ে এসেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ সহস্রাধিক ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, শিল্পের উপযোগী আইটি ও আইটিইএস সংশ্লিষ্ট দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, দেশব্যাপী ২৮ হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত শতভাগ ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকার গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনিওর প্রোগ্রামকে এগিয়ে দিতে স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার পরবর্তী অংশ হিসেবে বাংলাদেশী স্টার্ট-আপদের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দেশে ইনোভেশন কালচার ত্বরাণি¦ত  করতে সরকার ইনোভেশন ডিজাইন এন্ড অন্ট্রাপ্রেনিওরশীপ একাডেমী(আইডিয়া) প্রতিষ্ঠা করছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা প্রশংসনীয় উদ্ভাবন ও সফল স্টার্ট-আপদের সহায়তা, সম্বনয় ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আলোচনায় অংশ নিয়ে আইবিএম প্রতিনিধি দলকে বলেন,“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার কার্যকর পরামর্শ ও নির্দেশনায় দেশে উদ্ভাবনকে অনুপ্রেরণা যোগাতে ও স্টার্ট-আপ কালচার প্রতিষ্ঠা করতে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”  আগামী দিনের লক্ষ্য ও সে লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত কার্যক্রম উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় এগিয়ে থাকতে আইসিটি ডিভিশন এখন কগনেটিভ টেকনোলজিতে মনোযোগ নিবদ্ধ করেছে। এরই অংশ হিসেবে আমরা ইতোমধ্যে আইওটি(ইন্টারনেট অব থিংস) ল্যাব স্থাপন করেছি। স্থাপন করা হচ্ছে বিগ ডেটা, এআই(আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স), অ্যাডভান্সড রোবোটিকস, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবসহ আরো প্রায় ডজন খানেক ল্যাব। এছাড়াও, মেশিন লার্নিং, বায়োটেক, ফিনটেক ও এডুটেক খাতেও আমরা কাজ করতে চাই। এ জন্য দেশে স্টার্ট-আপ ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে আইসিটি ডিভিশনের সাথে আইবিএম এর এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমি আশা করি, আইবিএম  আগামী দিনেও ক্লাউড ও কগনেটিভ প্রযুক্তির মত নতুন নতুন প্রযুক্তির স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রাখবে।”

অনুষ্ঠানে আইবিএম দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক করন বাজওয়া বলেন, “বিস্তৃত ও শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্টার্ট-আপদের উদ্ভাবনে উদ্যোম যোগাতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আইবিএম গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনিওর প্রোগ্রাম এর সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” তিনি আরো বলেন, গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনিওর প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আইবিএম ভারতের বাজারে অর্থপূর্ণ সাফল্য পেয়েছে এবং হেলথটেক, ফিনটেক, এডুটেক ও স্মার্ট সিটির মত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা সহস্রাধিক স্টার্ট-আপকে পরবর্তী প্রজন্মের ক্লাউড ও কগনিটিভ প্রযুক্তিকে সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। আইবিএম এর গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনিওর প্রোগ্রামের আওতায় আইবিএম ক্লাউড পোর্টফোলিও ও ব্লুমিক্সে ওয়াটসন এপিআইগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশী স্টার্ট-আপগুলো যাতে সহজেই তাদের উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে উপার্জনের সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করা হবে। সবচেয়ে জরুরী হলো, এর মাধ্যমে দেশীয় উদ্যোগগুলো বৈশ্বিক পন্থায় দ্রুত গতিতে বাজারে স্থান করে নেবে ও সে সকল উদ্যোগের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।
এই কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে, ব্লুমিক্স প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ওয়াটসন, ক্লাউডান্ট ও কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনাসহ ১৫০ ধরণের সেবা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এছাড়া, সেবা সহায়তা হিসেবে ক্লাউড পরিসেবার নির্দিষ্ট সার্ভার, ক্লাউড সার্ভার বা উভয়ের মিশ্রিত সেবা গ্রহণ করতে পারবে।  নানা ধরণের আয়োজন, সিআইও(চীফ ইনফরমেশন অফিসার) ও উদ্যোক্তাদের সাথে সরাসরি সংযোগ ঘটিয়ে আইবিএম নতুন, সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি কোম্পানীগুলোকে তাদের উত্থান, সম্পৃক্তি এবং অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করবে যা শুরুতেই যে কোন উদ্যোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পণ্য উদ্ভাবন ও উন্নয়নে এ সকল উদ্যোগগুলোকে আইবিএম এর স্থানীয় ও বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানও  করা হবে।  স্টার্ট-আপরা আবেদন করতে ক্লিক করুন: https://developer.ibm.com/startups/ ব্লুমিক্স সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন:  www.bluemix.net

Share This:

*

*