প্রায় ৪ হাজার ৫০০ অবৈধ আইএসপি বন্ধ করা গেলে গ্রাহক সেবার মান ভালো করা সম্ভব বলে মনে করেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। দেশে লাইসেন্সধারী বৈধ আইএসপির (ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) চেয়ে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি মুলত এসব আলোচনায় এসব তথ্য জানা যায়। অবৈধ আইএসপির কারনেই সেবার মানও (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) ততটা উন্নত নয়।
আইএসপিগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি সূত্রে জানা যায় সেবার মান ভালো করার জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে শিগগিরই তারা একটি প্রস্তাবনা পাঠাবেন। প্রস্তাবনায় থাকছে, অবৈধ আইএপি বন্ধ, নির্দিষ্ট এলাকায় সেবা সম্প্রসারণের সুযোগ না থাকা, পেশি শক্তির ব্যবহার এবং ক্যাবল কাটার বিপরীতে আইএসপির শক্ত ভূমিকা রাখার বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া একটা মনিটরিং সেল গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে, যে সেল সেবার মান ঠিক আছে কিনা তার পর্যবেক্ষণ করবে।
সম্প্রতি বিটিআরসি দেশের ইন্টারনেট সেবার মান উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি সভা করে জানান আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক, সভায় আইএসপিএবি, আইআইজি, এনটিটিএন, আইটিরি শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইন্টারনেট সেবাখাতে কোথায় কোথায় সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করে সেসব সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয় সভায়। আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, আমরা বলেছি সেবার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা (আইআইজি, এনটিটিএন, আইটিসি) তাদের আপ টাইম ঠিক করে দিক। সেবার মান এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। তিনি আর বলেন, এটা তো প্রতিযোগিতা। এখানে খারাপ সেবা দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। খারাপ সেবা দিলে গ্রাহক সেই প্রতিষ্ঠান থেকে এমনিতেই চলে যাবে। তিনি জানালেন, শিগগিরই আইএসপিএবির পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা বিটিআরসিতে পাঠানো হবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের থানা পর্যায়ে ৪ হাজার ৫০০ এর অধিক আইএসপি আছে যাদের লাইসেন্স নেই এবং তারা অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এরা সেবাদানের পরিবর্তে তাদের পেশীশক্তি দেখাতে বেশি পারঙ্গম। মানসম্মত সেবা তাদের কাছ থেকে পাওয়া দুষ্কর। তারা প্রকৃত লাইসেন্সধারীদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় সেবাদান করতে বাধা দেয় এবং গ্রাহকদেরও তাদের কাছ থেকেই নিম্নমানের সেবা নিতে বাধ্য করে। লাইসেন্স নিয়ে, নিয়মিত তা নবায়ন করে ট্যাক্স ভ্যাট দিয়েও বৈধ লাইসেন্সধারীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেবা দিতে পারছে না। আইএসপিএবি মনে করে এসব অবৈধ আইএসপিগুলোকে বন্ধ করে দিলে শীর্ষস্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান উন্নত হবে।
আরও বলা হয়, ঢাকা শহরে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা আছে যেখানে নিজস্ব সোসাইটি গড়ে উঠেছে। যেমন নিকেতন সোসাইটি, বারিধারা সোসাইটি, ডিওএইচএস ইত্যাদি। এসব এলাকায় হাতে গোনা ২-৩টি নির্বাচিত আইএসপি আছে কেবল তারাই সেবা দিতে পারে। অন্য অপারেটররা সেসব এলাকায় সেবা দিতে প্রবেশ করতে পারে না। অন্যদিকে যে ২-৩টি আইএসপি আছে তাদেরকে সোইসাইটিরা নিবন্ধন ফি ও বিভিন্ন ধরনের চার্জ নিতে বাধ্য করে। ফলে আইএসপিগুলোর অপারেশন চার্জ বেড়ে যায় এবং তারা তাদের সেবার মানের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে সার্ভিস লেভেল ঠিক রাখে। ফলে সার্বিকভাবে কোয়ালিটি অব সার্ভিস বাধাগ্রস্ত হয়। এসব এলাকায় কোনও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নেই। ফলে গ্রাহকও তাদের পছন্দের অপারেটরকে বেছে নিতে পারে না।
আইএপিএবি বলছে যারা সারাদেশে সার্ভিস দেওয়ার জন্য লাইসেন্স নিয়েছে তাদের জন্য এই বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয়। তারা সব জায়গায় সেবা দেবে এমনটাই হওয়া উচিত। কোয়ালিটি অব সার্ভিস ভালো করতে হলে বিটিআরসি যদি এই বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিতে সাহায্য করে তাহলে গ্রাহকরা তাদের পছন্দ মতো আইএসপির কাছ থেকে ভালো সেবা নিতে পারবে।
স্থানীয় পেশীশক্তির উদ্ভব সেবার মান খারাপ করছে অভিযোগ করে বলা হয়, লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দিতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। কখনও ক্যাবল চুরি করা হচ্ছে, মেশিন খুলে নেওয়া হচ্ছে, অর্থ ব্যয় করে নেটওয়োর্কে স্যাবোটাজ ঘটানো হচ্ছে বা নিরবছিন্ন সেবা দিতে বাধা দান করছে। যারা এসব কাজ করছে বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তাদেরকে আইনের আওতায় নিতে পারে। এটা করা হলে নিরবছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দিতে কোনও সমস্যা হবে না এবং সেবার মান আরও উন্নত হবে।
আইএসপিএবির প্রস্তাবনায় রয়েছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার মান আরও উন্নত করতে বিটিআরসি একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে পারে। এই সেলের কাজ হবে গ্রাহকের অভিযোগ শোনা এবং সেবার মানের স্ট্যান্ডার্ড ঠিক আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। এই মনিটরিং সেল আইএসপিগুলোকে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে সহযোগিতা করবে। গ্রাহককে কুইক রেসপন্স জানাবে। বিটিআরসি তথা মনিটরিং সেল যদি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সেবার মানের স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দেয় সেটাকেও স্বাগত জানাবে আইএসপি।
সেবার মানের বিষয়ে জানতে চাইলে আইএসপি প্রতিষ্ঠান আম্বার আইটির প্রধান নির্বাহী আমিনুল হাকিম জানান, যেসব সমস্যা ও সমধানের কথা প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে তা কার্যকর করা গেলে আম্বার আইটির মতো আরও অনেক প্রতিষ্ঠান উন্নততর সেবা দিতে পারবে। তিনি বলেন, আম্বার আইটি এমনিতেই গ্রাহকবান্ধব আইএসপি কিন্তু সমস্যাগুলোর কারণে শতভাগ সেবা গ্রাহককে দিতে পারছে না। তিনি জানান, এলাকাভিত্তিক পেশীশক্তির কারণে অনেক এলকায় তাদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবেশ করতে পারছে না। ক্যাবল কাটা এবং চুরির মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ফলে সেবাদানে সমস্যা রয়েই যাচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ব্যান্ডউইথ বাড়িয়ে, প্যাকেজ রিডিফাইন্ড করেও এসব সমস্যার কারণে সব জায়গার গ্রাহকদের কাছে যেতে পারছে না। অবিলম্বে এসব সমস্যা দূর করে করে গ্রাহক সেবার মান ভালো করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।